• Colors: Blue Color

জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (২৭ এপ্রিল) আল জাজিরায় প্রধান উপদেষ্টার এই ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।

সাক্ষাৎকারটি নেন আল জাজিরার সাংবাদিক নিয়েভ বার্কার। তিনি শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু জবাবে মোদি বলেছিলেন তিনি এটি পারবেন না। কারণ ভারতে সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

‘শেখ হাসিনা দাবি করেন তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারত থেকে এসব বিবৃতি দিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে তার অবস্থানকে কীভাবে দেখে?’

আল জাজিরার সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হয়েছিলো আমার। তার সঙ্গে আমার কথা হয় এবং আমি তাকে স্পষ্ট করি, ঠিক আছে, যদি শেখ হাসিনাকে আপনি রাখতে চান। তাহলে এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমি কিছু করতে পারব না। কিন্তু অবশ্যই তিনি যখন সেখানে থাকবেন, তার কথা বলা উচিত হবে না। কারণ তার বক্তব্য আমাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। তিনি বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে উত্তেজিত করেন। আর এজন্য আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

আল জাজিরার সাংবাদিক তখন জিজ্ঞেস করেন ‘মোদি কী বলেছিলেন?’ 

জবাবে ড. ইউনূস বলেন- তিনি বলেছিলেন, ভারত হলো এমন দেশ যেখানে সামাজিক মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত। আমি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।

এ সময় আগামী ডিসেম্বরে অথবা পরের বছরের জুনে নির্বাচন দেওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে জানতে চান সাংবাদিক নিয়েভ বার্কার।

জবাবে প্রধান উপেদেষ্টা বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হলে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ চাইলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।

 

যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক আরোপের ফলে যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা থামানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে প্রথমবারের মতো নমনীয়তা দেখিয়েছেন। ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল, চীনের ওপর আরোপ করা ১৪৫ শতাংশ শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। 

পরে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টও বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ‘উত্তেজনা হ্রাস’ পাওয়ার পূর্বাভাস দেন।

বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে অবশ্যই চুক্তিতে আসতে হবে। তবে সংকট সমাধানে ট্রাম্পকেই আগে হাত বাড়াতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ মার্কিন শেয়ার বাজার থেকে কেড়ে নিয়েছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার। পড়ে গেছে ডলারের দাম।

 

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীনা মালবাহী জাহাজের বুকিংও কমে গেছে। ফলে চীনের রপ্তানি খাতেও নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

এরপরও দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হচ্ছে না। সংকট সমাধানের ব্যাপারে এখনও উদাসীন ওয়াশিংটন-বেইজিং।

এর নেপথ্যে কতকগুলো কারণ রয়েছে। বিশেষ করে সংকট সমাধানের মেজাজ চীনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। দেশটির নেতারা বিশ্বাস করেন, তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনায় শৃঙ্খলিত। বাণিজ্যযুদ্ধ মোকাবেলায় তারা কঠোর ও বেশি ঐক্যবদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীনে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা নেই, যা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে।  রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ব্যবহার করে জনসাধারণকে তারা ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে।

তাছাড়া চীনের হাতে এমন বিরল খনিজ আছে, যা মার্কিন অর্থনীতিকে আঘাত হানতে পারে।

বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘ হলে এই বিরল খনিজের মাধ্যমে চীন মার্কিন কারখানাগুলোকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিতে পারে। উচ্চ মূদ্রাস্ফীতি তৈরি করতে পারে।

আর এসব ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দ্রুত আসার আশঙ্কা রয়েছে, যা ট্রাম্পের জন্য ক্ষতিকর হবে। সেক্ষেত্রে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এরকম কোনো চাপ নেই।

এসব কারণেই চীন বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধে আগে থেকেই কোনো পদক্ষেপ নেবে না। তারা ট্রাম্পের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করবে।

ইতোমধ্যে ট্রাম্প বলেছেন, বল চীনের কোর্টে। তবে তার জোর দাবি, চীনকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে আসতেই হবে। ট্রাম্পের এই মনোভাব সম্পর্কে বেইজিং চুপ। ব্যাপারটি তারা কানেই নিচ্ছে না। কারণ চীনা নেতারা মনে করেন, ট্রাম্প এমন একজন নেতা, যিনি বারবার মন পরিবর্তন করেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য কোনো চুক্তিতে আটকে থাকতে পারেন না।

বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, এসবের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বাণিজ্যযুদ্ধ অবসানের পদক্ষেপগুলো ট্রাম্পের কাছ থেকেই আসতে হবে। সংকটের সমাধান বেইজিং থেকে উদ্ভূত হবে না। 
সেক্ষেত্রে ট্রাম্পকেই চুক্তির ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ চিন লড়াইয়ে জিততে চায়। তারা আন্তর্জাতিকভাবে এই জয়কে উপস্থাপন করতে চায়।

ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। তখন বেইজিং ২০০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত মার্কিন পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত অকার্যকর হয়ে পড়ে।

কারণ বেইজিং ক্রয় প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। চীন এভাবে করতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হতে পারে।

বিশ্লেষণে বলা হয়, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়া জরুরি। যাতে উভয়পক্ষ বাণিজ্যের জন্য আগ্রহ পেতে পারে।

সেক্ষেত্রে দুই পক্ষের উচিত যৌথ বাণিজ্যিক পদক্ষেপ ঘোষণা দেওয়া। যেমন, চীন পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা দিয়েছে।

চীন যদি তা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিকভাবেই তারা কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের সামনে জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট খাতের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগের দরজা উন্মুক্ত রাখার সুযোগ আছে। কারণ চীনা বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পায়নে অগ্রগতি এনে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে শি জিনপিংও মার্কিন বাজারে মুনাফা করে সাফল্যের দাবিদার হতে পারেন।

আগামী নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় এপিইসি বা অ্যাপেক সম্মেলনে ট্রাম্প ও শির মধ্যে বৈঠক হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

সেখানে আলোচনার মাধ্যমে একটা পথ খুলে যেতে পারে দু’দেশের জন্য। আর এর আগে যদি ক্রমবর্ধমান সংকট এড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নিতে হয়, তবে তা ট্রাম্পকেই নিতে হবে। সূত্র: টাইম।

রোমের সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর ব্যাসিলিকায় রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসকে সমাহিত করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এদিন (২৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় ইতালির ফিউমিচিনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে ভ্যাটিকান সিটিতে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন পোপ ফ্রান্সিসকে।

ড. ইউনূস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। অন্য বিশ্বনেতাদের মধ্যে ফ্রান্সিসের জন্মভূমি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন ক্যাথলিক চার্চের কার্ডিনাল কলেজের ডিন জিওভান্নি বাত্তিস্তা রে।

পোপের কফিন বন্ধ করার আগে সাদা রেশমের কাপড়ে পোপের মুখ ঢেকে দেয়া হয়। শরীরে দেয়া হয় পবিত্র পানি। কফিনের ভেতরে দেয়া হয় পোপের দায়িত্বকালে তার জন্য তৈরি বিভিন্ন মুদ্রা ও স্মারক। এ ছাড়া তার ১২ বছরের দায়িত্বকালের বিভিন্ন অর্জনের কথাযুক্ত একটি দলিলও কফিনে রাখা হয়।

উল্লেখ্য, পোপ ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। যিনি পোপ নির্বাচিত হন, তিনি ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সব ক্যাথলিক চার্চের প্রধান হিসেবে বিবেচিত হন। 

কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) পেহালগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই ঘটে গোলাগুলির এ ঘটনা।

ভারত সেনাবাহিনীর বরাতে জানা গেছে, কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখার একাধিক স্থানে পাকিস্তান থেকে প্রথমে গুলি ছোড়া হয়। পরে তার জবাব দেয় ভারতের সেনাবাহিনী।

তবে, পাল্টাপাল্টি এ হামলায় এখনও হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, দু’দেশের সেনারাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। হামলাকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে চলছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ইতোমধ্যে চিরবৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে নয়াদিল্লি। ভারতের বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার একদিন পর পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণাও দিয়েছে পাকিস্তান।

ছয় দশকেরও আগে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে করা সিন্ধুর পানির বণ্টন ‍চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। সম্প্রতি দেশটির কাশ্মিরের পেহলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরের প্রতিক্রিয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতিতে এটি যেন প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টিরই আগমনী বার্তা।

কী আছে এই চুক্তিতে
চুক্তির সেই ধারা অনুযায়ী সিন্ধু নদের ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। যাতে রাভি, বিয়াস ও সুললেজ নদীর পানি ভারতের এবং সিন্ধু, ঝিলুম ও চিনাব নদীর পানি পাকিস্তানের পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা আসায় এই ধারা মোড় নিতে পারে অন্যভাবে, যা পাকিস্তানের জন্য অবশ্যই সুখকর হবে না।

এই চুক্তির আওতায় উজানের দেশ ভারত জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সীমিত সেচের মতো কাজে পশ্চিমের নদীগুলো ব্যবহারের অধিকার রাখে। তবে চুক্তিতে বলা আছে সেই কাজটি এমনভাবে করতে হবে, যাতে নদীর প্রবাহ ঘুরে না যায়। পাকিস্তানের জন্য এই চুক্তি অনেক বড় কিছু। দেশটির নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে সম্পূর্ণ সেচ ব্যবস্থা ও কৃষিকাজে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে এই নদীগুলো। তাই সামান্য প্রবাহ বাধা পেলে, এর রেশ নেতিবাচকভাবে বড় পরিসরে ঘটার সম্ভাবনাই বেশি।

অবশ্য, চুক্তি স্বাক্ষরের সময় এর মেয়াদ শেষের তারিখ কিংবা স্থগিতের কোনো বিধান রাখা হয়নি।

ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে পানি বণ্টন যেভাবে হতে পারে
নয়াদিল্লির নতুন সিদ্ধান্তে এই প্রশ্ন সবার আগে আসে- ভারত কি পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বন্ধ করতে কিংবা প্রবাহে কোনো সরাসরি বাধা সৃষ্টি করতে পারে কি না? এর সহজ উত্তর হলো, না।

সিন্ধু, ঝিলুম ও চিনাব বড় নদী। বছরের মে-সেপ্টেম্বরে বরফ গলার ফলে এই নদীগুলো কয়েক বিলিয়ন ঘনমিটার পানি বহন করে। নদীগুলোর উজানে ভারতের বেশকিছু অবকাঠামো রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাগলিহার ও কিষাণগঙ্গা বাঁধ। তবে এর কোনোটিই বিপুল পরিমাণ পানি ধরে রাখার মতো শক্তিশালী নয়। ভারত যদি তার বিদ্যমান সমস্ত বাঁধের পানি ছেড়েও দেয়, তবুও মোট পানি প্রবাহে খুব বেশি পরিবর্তনই ঘটবে না।

ভারত ইতোমধ্যেই চুক্তির অধীনে বরাদ্দকৃত পূর্বের নদীগুলোর বেশিরভাগ পানি ব্যবহার করে, তাই সেই নদীগুলোতে যেকোনো নতুন পদক্ষেপে ভাটি অঞ্চলে সীমিত প্রভাব পড়বে।

তবে পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো শুষ্ক মৌসুমে কী ঘটবে, যখন অববাহিকায় পানির প্রবাহ কম থাকে। তখন চুক্তির অনুপস্থিতি তারা তীব্রভাবে অনুভব করতে পারে। এক্ষেত্রে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ওপর ভারতের কর্তৃত্ব তৈরি হতে পারে। তবে সেই কাজটিও সহজ নয়। যেকোনো বড় আকারের বাঁধ বা জলপথ পরিবর্তনে নেয়া নতুন প্রকল্প নির্মাণে বহু বছর সময় লাগে। আর ভারতীয় কাশ্মিরে তেমন স্থান সীমিত এবং তা করা ভূতাত্ত্বিকভাবেও চ্যালেঞ্জিং। এর খরচ যেমন বিশাল, তা রাজনৈতিকভাবেও হবে ঝুঁকিপূর্ণ।

অপরদিকে, পাকিস্তানও দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, ভারত যদি পশ্চিমের নদীগুলোতে পানি ধরে রাখার মতো কিছু করে, তবে তা সম্ভাব্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি করবে। স্যাটেলাইটের যুগে এই ধরনের কাঠামো গোপনে তৈরি করাও সম্ভবপর নয়। আবার চিনাব বা ঝিলুমের মতো নদীতে পানি ধরে রাখতে গেলে ভারতে নিজস্ব উজানের অঞ্চলগুলোতেও বন্যার ঝুঁকি থাকে।

পাকিস্তানের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব
ভারতের এই পদক্ষেপে সার্বিক সীমাবদ্ধতা সামনে এলেও চুক্তি সুরক্ষার বিষয়টি এখনও গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ এই নয় যে, একদিন বাদেই পানি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। বরং নয়াদিল্লি এটি খুব সম্ভত করবেও না।

সিন্ধু, ঝিলম ও চিনাবের প্রবাহ পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। আর এই মুহূর্তে পাকিস্তানের কাছে এর কোনও বিকল্প নেই। পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা বিশ্বের বৃহত্তম সেচ ব্যবস্থাগুলোর একটি, আর এটি পশ্চিমের নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল। এই নদীগুলোর পানির ওপর খালগুলোও নির্ভরশীল, পানিপ্রবাহে সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটলেও সেচব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎক্ষণিক ঝুঁকি হল স্থিতিশীলতার অভাব।

পাকিস্তানের জিডিপির ২১ শতাংশই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশটির ৪৫ শতাংশ কর্মজীবীর কর্মসংস্থানও হয় কৃষি খাতে। এই আবহে পাকিস্তান যদি সিন্ধুর পানি থেকে বঞ্জিত হয়, তাহলে তাদের অর্থনীতিতে বড় রকমের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পশ্চিমের নদীগুলো পাকিস্তানে পানির প্রধান উৎস। পাকিস্তানের জন্য তাই পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকা খুবই জরুরি। তারপর রয়েছে বিদ্যুৎ। পাকিস্তানের বিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশ জলবিদ্যুৎ থেকে আসে। উজানের প্রবাহ হ্রাস পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যা বলে
সিন্ধুর পানি চুক্তি তার স্থায়িত্বের জন্য প্রশংসিত হলেও গত দশক ধরেই এটি চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০১৩ সালে একটি সালিশি আদালত পাকিস্তানের পক্ষে রায় দেয় এবং ভারতকে কিষাণগঙ্গা প্রকল্পের ভাটিতে ন্যূনতম প্রবাহ ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। কিন্তু, ২০১৬ সালের উরি হামলার পর সেই ধারায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ভারত নিয়মিত সহযোগিতা স্থগিত করে, দীর্ঘকাল ধরে স্থগিত রাখা বাঁধ প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদন শুরু করে এবং পানিকে তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনার হাতিয়ার করে।

তখনও ভারত বলেছিল যে তারা চুক্তির মধ্যে থেকেই কাজ করবে। কিন্তু ২০২৩ সালে সেটিও পরিবর্তিত হতে শুরু করে, যখন ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ অনুচ্ছেদের ৩ ধারা (যে বিধান অনুসারে কেবল পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমেই চুক্তি সংশোধন করা যায়) প্রয়োগ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা এবং পাকিস্তানের বাধার কারণ দেখিয়ে চুক্তি পর্যালোচনার অনুরোধ করে। পাকিস্তান পর্যালোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।

ভারতের সাম্প্রতিক ঘোষণায় ১৯৬০ সালের পর এই প্রথম চুক্তির বাইরে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এটি একটি দর কষাকষির কৌশল নাকি স্থায়ী বিচ্ছেদ, তা এখনও দেখার বাকি।

উল্লেখ্য, সিন্ধু এবং এর উপনদীগুলো হাজার হাজার বছর ধরে একটি সভ্যতাকে টিকিয়ে রেখেছে। সময়ের পরিক্রমায় এখন দুটি আধুনিক পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এর গতিপথ। এখন দেখার বিষয়, পানিপ্রবাহের পাশাপাশি পাক-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কতটা পরিবর্তিত হয়।

আমাদের অনুসরণ করুন

 

সর্বাধিক পড়ুন

  • সপ্তাহ

  • মাস

  • সব