• Colors: Blue Color

ইরান–ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে ইসরায়েল অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউজার্সিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। খবর টাইমস অব ইসরায়েল।

এমনকি ইসরায়েলকে এ মুহূর্তে হামলা বন্ধ করতে বলা তার জন্য কঠিন হবে বলেও মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প বলেন, এই মুহূর্তে হামলা থামাতে বলাটা কঠিন। কেননা যুদ্ধে কেউ এগিয়ে থাকলে তাকে থামানো, হারতে থাকা পক্ষকে থামানোর চেয়ে কঠিন। তবে আমরা ইরানের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত এবং সক্ষম—ইরানের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলছে।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধে ইসরায়েল ভালো করছে, অন্যদিকে ইরান কম ভালো করছে। এ অবস্থায় কাউকে থামাতে বলা একটু কঠিন।

এর আগে গত শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর সিএনন’র।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেয়া যাবে না।

চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন হামলা চালানোর এখতিয়ার আছে কি না— এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, একমাত্র কংগ্রেসের হাতে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা থাকলেও, ইতিহাস বলছে, বিগত সময়ে অনেক প্রেসিডেন্টই কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নিয়েছেন সামরিক পদক্ষেপ।

এবার ট্রাম্প যাতে এ ধরনের উদ্যোগ না নিতে পারেন, তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন কিছু মার্কিন কংগ্রেসম্যান। কারণ তারা মনে করছেন, এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়। আর সাংবিধানিকভাবে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া, একতরফাভাবে প্রেসিডেন্টের কোনো সামরিক পদক্ষেপ সমর্থন করেন না তারা।

মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোনোভাবেই উচিত নয় ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানো। আর যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই, এ ক্ষমতা আছে শুধুমাত্র কংগ্রেসের। ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি সকল যুদ্ধ বন্ধ করতে এসেছেন, শুরু করতে নয়। তাই এ নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রতিদিনই বিতর্ক চলছে।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি ও ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রো খান্না হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি যৌথ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে বলা হয়, কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া ইরানে কোনো সামরিক অভিযান চালাতে পারবেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে রয়েছে প্রস্তাবটি, যেখানে ১৫ দিনের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নিলে সরাসরি ভোটের জন্য হাউসে উঠবে এটি। প্রস্তাবটি পাশ হলে, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানে বড় কোনো সামরিক হামলা বা যুদ্ধ শুরু করতে পারবেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

তবে শুধু সাংবিধানিক বাধা-ই নয়, ইরানে হামলা না করতে মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের পাশাপাশি ব্যবসায়িদের পক্ষ থেকেও চাপ বাড়ছে ট্রাম্পের ওপর। এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে ক্ষতির মুখে পড়বে সারা বিশ্বের অর্থনীতিও।

সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিলিপ ইনগ্রাম বলেন, ইরানে যদি যুক্তরাষ্ট্র অভিযান শুরু করে, তাহলে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল ও গ্যাসের বাণিজ্য হয় এ পথে। আর তা বন্ধ হয়ে গেলে হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি।

প্রসঙ্গত, অতীতে সরাসরি প্রেসিডেন্টের নির্দেশে কোরীয় এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইরান-ইসরায়েল ইস্যুতে তাদের প্রত্যক্ষ অবস্থান নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

ইসরায়েলি নারকীয় আক্রমণে নিহত হয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিশনারি গার্ড সংস্থার গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমীসহ আরও দুই কর্মকর্তা।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা। রোববার ইসরায়েলের নির্বিচার গোলাবর্ষণে মোহাম্মদ কাজেমীর পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছেন তার সহকারী দুই জেনারেল হাসান মোহাঘেগ ও মোহসেন বাঘেরি।

আইআরজিসির পাশাপাশি তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন শহরে টানা ৪র্থ দিনের মতো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। বার্তা সংস্থা সিএনএন জানায়, ইরান থেকে নতুন করে আরও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফলে ইসরায়েলি নাগরিকদের দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তেলআবিবে সাইরেন শোনা গেছে এবং বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সিএনএনের সাংবাদিকরা।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে ও ইরানের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা চলছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। এ সময় ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। খবর আরব নিউজের।
  
রোববার (১৫ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ওপর হওয়া ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে সৌদি যুবরাজ বলেন, এই হামলা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। লঙ্ঘন করেছে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে চলমান সংলাপকে ব্যাহত করেছে। উত্তেজনা হ্রাস এবং কূটনৈতিক সমাধানকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ফোনকলে বিরোধ সমাধানের জন্য শক্তি প্রয়োগ বন্ধ ও মতপার্থক্য সমাধানের ভিত্তি হিসেবে সংলাপের ওপর জোর দিয়েছেন সালমান।

অন্যদিকে মাসুদ পেজেশকিয়ান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে বলেন, আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ইহুদিবাদী সরকার (ইসরায়েল) আমরা যেখানে কিছু অর্জন করতে চেয়েছিলাম প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ও নাশকতা সৃষ্টি করেছে।

উল্লেখ্য, ইরান ও সৌদি আরব ২০২৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে চালু করার ঘোষণা দেয়। ওই সময় থেকে দেশ দুটির সম্পর্কে শীতলতা কাটতে শুরু করে।

আমাদের অনুসরণ করুন

 

সর্বাধিক পড়ুন

  • সপ্তাহ

  • মাস

  • সব