২০১৩ সালের ৫ মে। ইসলাম অবমাননাকারীদের শাস্তি ও নারীনীতির বিরোধীতা করে ১৩ দফা দাবিতে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ। দিনভর চলা সমাবেশে বিকেলের দিকে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন কওমী মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠনটির নেতারা। দিনভর দফায় দফায় চলে নানামুখী সংঘর্ষ।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন স্থানে জ্বলতে থাকে আগুন। হেফাজত নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে মধ্যরাতে অপারেশনের প্রস্তুতি নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাত তিনটার দিকে একদিক খোলা রেখে তিনদিক থেকে চালানো হয় অপারেশন। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়।

মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালিত অপারেশনে ঠিক কতজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন- তার সঠিক সংখ্যা এখনও নির্ণয় করতে পারেনি সংগঠনটি। যদিও নিহত ৬১ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন, অধিকার।

শাপলা চত্বরে হামলা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে দেশ-বিদেশে। সেই সময়ে এ ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের করতে পারেনি হেফাজত। উল্টো সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয় বিভিন্ন থানায়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শাপলার ঘটনাকে গণহত্যা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দু’টি অভিযোগ জমা দেয় হেফাজত। যাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, জিয়াউল আহসানসহ অর্ধশত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

এ ঘটনার এক যুগ পর পাল্টেছে পরিস্থিতি। কিন্তু নিহতের সঠিক সংখ্যা কী নির্ণয় করতে পেরেছে হেফাজত? এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক জানান, বেশকিছু লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। চাপের মুখে অনেক পরিবার তাদের পরিবারের সদস্যের মারা যাওয়ার বিষয়টি চেপে গিয়েছেন। মে মাসের মধ্যেই নিহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

তিনি আরও জানান, শাপলা হত্যাকাণ্ডসহ যে কয়টি হত্যাযজ্ঞ হয়েছে সব কয়টিতে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান হেফাজতে ইসলামের এই নেতা।

শাপলার ঘটনার পর ৬১ জন নিহতের একটি তালিকার কথা জানায় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। এরপরই ঘড়গ নেমে আসে সংগঠনটির উপর। তথ্য-প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করে কারাদণ্ড দেয়া হয় অধিকারের সম্পাদক ও বর্তমান উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে।

নিহতের তালিকা করতে গিয়ে কঠিন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় অধিকারের তদন্ত দলকে। অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান জানান, তথ্য অনুসন্ধান দল যখন বিভিন্ন জায়গায় যায় তখন জানতে পারে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগী পরিবারদের ওপর নানা নিপীড়ন চালাচ্ছে। তাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। সিভিল এবং পুলিশ প্রশাসনও তাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছিল।

হেফাজতের দায়ের করা মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, দুইটি অভিযোগ একসাথে করে তদন্ত কর্যক্রম চালাচ্ছে তদন্ত সংস্থা। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে একটি পিটিশন ফাইল করা হয়। এর ওপর ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ছিল। অনেকে পলাতক আছে তাদের পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।

শাপলা চত্বরের ঘটনায় আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়, যা মতিঝিল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আসন্ন ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ, পশু আনা নেওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (৪ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখছি মানুষ কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমাজের হতদরিদ্র মানুষ, যারা এই চামড়া বিক্রির টাকার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই অব্যবস্থাপনার অবসান হওয়া প্রয়োজন।

পশুর চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেট আছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যাতে কোনো সিন্ডিকেট বা অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ চামড়ার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়।

অপরদিকে, কোরবানির পশু পরিবহণ ও হাটে বিক্রির সময় যাতে পশুর প্রতি কোন নির্দয় আচরণ করা না হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে ইটিপির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।কমিটিতে আরও থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি।

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

পৃথিবীর মধ্যে ভারতই একমাত্র দেশ, যারা পানিকে মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আব্বাস। তিনি বললেন, বিগত সময়ে শেখ হাসিনার কারণে তিস্তায় পানি আসেনি। গণআন্দোলনের মাধ্যমেই তিস্তায় পানি নিশ্চিত করা হবে।

রোববার (৪ এপ্রিল) বিকেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত শুরু করার দাবিতে রংপুরে সমাবেশ আয়োজন করে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’। গণপদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আগেই এই পানির হিস্যা আদায় করতে পারতাম, যদি শেখ হাসিনার মতো সরকার বাংলাদেশে না আসত। পানি নিয়ে তারা কোনোদিনও কথা বলেনি। ভারতকে এই ন্যায্য পানির হিস্যা দিতে হবে। না দেওয়া পর্যন্ত শুরু হওয়া এই আন্দোলন থামবে না।

সমাবেশ উপলক্ষে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে বিকেল ৪টার আগেই হাজার মানুষের উপস্থিতিতে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এ অঞ্চলের ২ কোটি মানুষের লাইফলাইন তিস্তার পানির হিস্যা আদায় এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবিতে গণপদযাত্রায় অংশ নেন।

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এছাড়াও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগ দেন।

প্রায় ১৭ বছর পর শাশুড়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন ডা. জোবাইদা রহমান। তার এই ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। তিনি কি বিএনপির নেতৃত্বে আসবেন? নাকি ফিরবেন পুরনো চিকিৎসা পেশায়? বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতারা মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

তারেক রহমানের আগে জোবাইদা রহমানের আগমন ঘিরে অনেকের মাঝে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। এটি কি নিছক শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গী হওয়া? নাকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর পাশে থাকা? তবে বহুবছর ধরে তার বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার যে গুঞ্জণ ছিল, তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, সিলেট অঞ্চলে জোবাইদা রহমানের অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে তিনি রাজনীতি আসবেন কি না তা আমার জানা নেই। তিনি যদি রাজনীতি আসতে চান তাহলে স্বাগত জানাবো।

ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হলে, তা কি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করবে?

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ বলেন, জোবাইদা রহমান দীর্ঘদিন রাজনৈতিক পরিবারের সাথে ছিলেন। ফলে তার রাজনৈতিক পরিপক্বতা এসেছে ও রাজনীতি শিখেছেন। ফলে রাজনীতি করা তার জন্য কঠিন কিছু হবে না।

তিনি আরও বলেন, জোবাইদা রহমান রাজনীতি আসলে বিএনপির জন্য ভালো হবে। কেন্দ্রীয় নেতার অভাবে এতোদিন বিএনপির মধ্যে একটা নৈতিক শূণ্যতা ছিল, সেটি তিনি অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করি। এতে দলটির নৈতিক শক্তি ও জনপ্রিয়তা বাড়বে।

১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন জোবাইদা রহমান। জিয়া পরিবারের পুত্রবধূ হলেও জোবাইদা চিকিৎসা পেশায় ব্যস্ত জীবন কাটিয়েছেন। রাজনীতিতে না জড়ালেও তারেক রহমানসহ অন্যদের সঙ্গে দুর্নীতি মামলার শিকার হয়েছেন। একপর্যায়ে অসুস্থ স্বামীর পাশে থাকতে লন্ডনে চলে যান তিনি। এরপর ২০১৪ সালে কর্মস্হলে না থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার সরকার তাকে চাকরিচ্যুত করে।

২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচারিক আদালতের সেই সাজা স্থগিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেছেন, জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। অন্যথায় জনসংখ্যা দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

শনিবার (৩ মে) সকালে আগারগাঁওয়ের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে বুয়েট, রুয়েট, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। সার্টিফিকেট অর্জনের সাথে জ্ঞান ও দক্ষতার সামঞ্জস্য না থাকায় শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভুগেন। সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্বে নার্সিং পেশার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দক্ষ লোকবল তৈরির অভাবে তাদের পাঠানো যাচ্ছে না। এছাড়া বিভিন্ন ভাষা ওপরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার মানের অবনতি ঘটেছে। মানের উন্নতি হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে। তাছাড়া, অভিভাবকরাও বর্তমান কারিকুলাম গ্রহণ করেনি।

শনিবার (৩ মে) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরষ্কার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার উপর অনেকগুলো ঝড়ঝাপটা গিয়েছে। কোভিডের সময় বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ছিল। ফলে অনেক বাচ্চারা ঝড়ে গেছে। সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুরা যুক্তিচর্চা ও দলগত কাজ শেখে। এগুলো করতে গিয়ে কথা বলার দক্ষতা ও সাহস বাড়ে। এছাড়া, তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে শিশুদের পড়াশোনার আগ্রহ বাড়ে। বিতর্ক প্রতিযোগিতা শিক্ষার উন্নতিতে সহায়তা করে। এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।

এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদ আলম রানাসহ বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারমুখী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ। তিনি বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানে ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে এবং ১৫শ’ মানুষ মারা গেছে। এটাকে কোনোভাবেই মুছে দেয়া যাবে না।

শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘পিএফএস: পলিউশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষের সুরক্ষা হয় না। তাই সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই রাসায়নিক দূষণ থেকে আমাদের নদী ও মানুষকে বাঁচানো সম্ভব।

এই আলোচনায় গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও নতুন বন্দোবস্ত প্রয়োজন।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন গবেষক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক করিডর দেয়ার বিষয়ে জনগণ বা রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছু জানায়নি। করিডরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদের কাছ থেকে আসতে হবে। বিদেশীদের নয়, সরকারকে সবার আগে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয় শ্রমিকদলের সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, দেশে সংস্কার নিয়ে শোরগোল চলছে। কিন্তু সেই কর্মযজ্ঞে শ্রমজীবী মানুষের কন্ঠস্বর কোথায়? রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জনগনের কথা পৌঁছাতে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার প্রয়োজন। কারণ প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতরা জনগণের কথা শুনতে বাধ্য। অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যে বিভেদ উসকে দিতে চায়। এ সময় সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচার যাতে মাথাচাড়া দিতে না উঠতে পারে, সেজন্য জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইলে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষমতার সুপ্তবাসনা যেন স্বৈরাচারের পথে ঠেলে না দেয়।

তিনি আরও বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রায় আট কোটি মানুষই শ্রমজীবী। এই শ্রমিকরাই উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রাণ। কর্মজীবীদের অবহেলা বা অধিকার বঞ্চিত রেখে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনটি সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। 

মহান মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশে এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’। 

মে দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে এই দিবসের তাৎপর্য ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ফলে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় নেমে আসে আট ঘণ্টায়। সারা বিশ্বের শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করেন। নিজেদের অধিকার আদায়ে সফল হয়েছেন। 

বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়। মে দিবসের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়, তার ফলে ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করে সামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য। তবে শ্রেণি-বৈষম্য এখনও পুরোপুরি দূর না হলেও মে দিবসের সেই আত্মত্যাগ নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে অনেকটাই মুক্ত করেছে।

মহান মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। 

দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে মে দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রমিক ও মালিক পরস্পরের পরিপূরক, আর তাদের যৌথ প্রচেষ্টাই একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত, কৃষি, শিল্প, নির্মাণ, পরিবহন, প্রযুক্তি—প্রতিটি খাতের উন্নতির পেছনে রয়েছে শ্রমিক এবং মালিকের মেধা ও প্রাণান্তকর পরিশ্রম। এ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আস্থার পরিবেশ সুদৃঢ় করতে হবে। আমরা যদি ঐক্য ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখি, তাহলে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব হয়ে উঠবে।

বাংলণাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রম অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ণে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন শ্রম বিষয়ে অংশীজন ও বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন ২১ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে তারা। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম শাখার এক স্মারকে শ্রমিককে চাকুরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং মহান মে দিবসে কারখানা বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে-

গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (আরএমজি বিষয়ক টিসিসি) এর ২০তম সভার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তসমূহ প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশক্রমে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়। 

সিদ্ধান্তসমূহ হচ্ছে- ‘যৌক্তিক কারণ এবং শ্রম আইনের প্রতিপালন ব্যতীত শ্রমিক চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করা যাবে না। এক্ষেত্রে শ্রমিক চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করার পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং বিজিএমইএ এর ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। শ্রম আইন মেনে শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত/ছাঁটাই করা না হলে-মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্মারকে বলা হয়, মহান মে দিবসে সকল কারখানা/প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোন কারখানা কর্তৃপক্ষ মে দিবসে কারখানা খোলা রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শ্রম শাখার উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ স্মারক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা তাদের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভসমুদ্রে। এক লাখ ৮৫ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরও বহু বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝাণ্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে অন্তত ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান।

হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এরপর থেকে দিনটি ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। 

তবে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসাবে পালন করতে শুরু করে।

শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব ও ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সালাহ উদ্দিন মিয়াজী জামিন পেয়েছেন। বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

কারাগারের জেলার মনির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সাবেক সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিন মিয়াজীকে জামিন দিলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মশিয়ূর রহমান বলেন, বয়স বিবেচনায় এবং সরকারি হাসপাতাল থেকে অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেয়ার পর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এমরান হোসেন চৌধুরী তাকে জামিন দেন।

তিনি আরও বলেন, সালাহ উদ্দিন মিয়াজীর নামে দেশের কোনও থানায় মামলা নেই। এমনকি তিনি দুই মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকলেও তার বিরুদ্ধে পুলিশ এমনকি তার নির্বাচনী এলাকার কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মামলা করেনি।

এর আগে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে যশোরে নিজের রিসোর্ট থেকে সালাহ উদ্দিন মিয়াজীকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। সেদিনই রাতেই বিশেষ নিরাপত্তায় ঝিনাইদহ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাকে। জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। পরবর্তীতে বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগ মামলায় সালাহ উদ্দিন মিয়াজীকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাহউদ্দিন মিয়াজী। এর আগে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘ ৩২ বছর প্রতীক্ষার পর অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে আগামী ৩১ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় জাকসুর পূর্বের গঠনতন্ত্র বাতিল ঘোষণা করে নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি

প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জাকসু) বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ প্রথম জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এক ছাত্রের বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাঁধলে সে সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করলেও আর নির্বাচন হয়নি।

আজ রাত ১২ ঘটিকা ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ করেছে প্রশাসন। দক্ষিণ -পূর্ব  এশিয়ার বৃহৎ কৃত্রিম জলাধারে কার্পজাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে অন্যান্য বছরের মতো এবারো তিন মাস সব ধরনের মাছ শিকার বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) সূত্র জানিয়েছে,  নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে স্থানীয় বরফকল বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারসমূহ ও কাপ্তাই হ্রদ মনিটরিং করা হবে।


সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও সুষম বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনমাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়ে থাকে। এই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল জেলেদেরকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সহায়তা দেয়া হয়। এছাড়া অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নৌ-পুলিশ মোতায়েন করা হবে। হ্রদে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক এবং কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ,  বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের নিষেধাজ্ঞার আরোপ শুরু হচ্ছে। এসময় কাপ্তাই হ্রদ নির্ভর জেলেদের ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। বিএফডিসির তত্ত্বাবধানে জেলেদের মাঝে খাদ্যশস্য বুতরণ করা হবে। 

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছে। মাছ শিকার বন্ধকালীন সময়ে জেলেদের খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। এবছর কাপ্তাই হ্রদে ৬০ মেট্রিক টন কার্পজাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। 

প্রসঙ্গত, প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন ও অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি লক্ষ্যে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষে আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় মাছ আহরণের নতুন মৌসুম যা শেষ হয় পরবর্তী বছরের এপ্রিলে।  মূলত প্রতি মৌসুমে নয় মাসই মাছ আহরণ করা হয়ে থাকে কাপ্তাই হ্রদে। রাঙামাটি আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত এ কাপ্তাই হ্রদে সরকারি হিসাবে প্রায় ২৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে পরিবার মাছ ধরাসহ সংশ্লিষ্ট পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে জেলেরা।

https://fibd.tv/