ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর সিএনন’র।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেয়া যাবে না।

চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন হামলা চালানোর এখতিয়ার আছে কি না— এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, একমাত্র কংগ্রেসের হাতে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা থাকলেও, ইতিহাস বলছে, বিগত সময়ে অনেক প্রেসিডেন্টই কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নিয়েছেন সামরিক পদক্ষেপ।

এবার ট্রাম্প যাতে এ ধরনের উদ্যোগ না নিতে পারেন, তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন কিছু মার্কিন কংগ্রেসম্যান। কারণ তারা মনে করছেন, এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়। আর সাংবিধানিকভাবে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া, একতরফাভাবে প্রেসিডেন্টের কোনো সামরিক পদক্ষেপ সমর্থন করেন না তারা।

মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোনোভাবেই উচিত নয় ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানো। আর যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই, এ ক্ষমতা আছে শুধুমাত্র কংগ্রেসের। ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি সকল যুদ্ধ বন্ধ করতে এসেছেন, শুরু করতে নয়। তাই এ নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রতিদিনই বিতর্ক চলছে।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি ও ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রো খান্না হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি যৌথ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে বলা হয়, কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া ইরানে কোনো সামরিক অভিযান চালাতে পারবেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে রয়েছে প্রস্তাবটি, যেখানে ১৫ দিনের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নিলে সরাসরি ভোটের জন্য হাউসে উঠবে এটি। প্রস্তাবটি পাশ হলে, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানে বড় কোনো সামরিক হামলা বা যুদ্ধ শুরু করতে পারবেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

তবে শুধু সাংবিধানিক বাধা-ই নয়, ইরানে হামলা না করতে মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের পাশাপাশি ব্যবসায়িদের পক্ষ থেকেও চাপ বাড়ছে ট্রাম্পের ওপর। এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে ক্ষতির মুখে পড়বে সারা বিশ্বের অর্থনীতিও।

সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিলিপ ইনগ্রাম বলেন, ইরানে যদি যুক্তরাষ্ট্র অভিযান শুরু করে, তাহলে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল ও গ্যাসের বাণিজ্য হয় এ পথে। আর তা বন্ধ হয়ে গেলে হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি।

প্রসঙ্গত, অতীতে সরাসরি প্রেসিডেন্টের নির্দেশে কোরীয় এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইরান-ইসরায়েল ইস্যুতে তাদের প্রত্যক্ষ অবস্থান নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

ইসরায়েলি নারকীয় আক্রমণে নিহত হয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিশনারি গার্ড সংস্থার গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমীসহ আরও দুই কর্মকর্তা।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা। রোববার ইসরায়েলের নির্বিচার গোলাবর্ষণে মোহাম্মদ কাজেমীর পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছেন তার সহকারী দুই জেনারেল হাসান মোহাঘেগ ও মোহসেন বাঘেরি।

আইআরজিসির পাশাপাশি তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন শহরে টানা ৪র্থ দিনের মতো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। বার্তা সংস্থা সিএনএন জানায়, ইরান থেকে নতুন করে আরও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফলে ইসরায়েলি নাগরিকদের দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তেলআবিবে সাইরেন শোনা গেছে এবং বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সিএনএনের সাংবাদিকরা।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে ও ইরানের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা চলছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। এ সময় ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। খবর আরব নিউজের।
  
রোববার (১৫ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ওপর হওয়া ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে সৌদি যুবরাজ বলেন, এই হামলা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। লঙ্ঘন করেছে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে চলমান সংলাপকে ব্যাহত করেছে। উত্তেজনা হ্রাস এবং কূটনৈতিক সমাধানকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ফোনকলে বিরোধ সমাধানের জন্য শক্তি প্রয়োগ বন্ধ ও মতপার্থক্য সমাধানের ভিত্তি হিসেবে সংলাপের ওপর জোর দিয়েছেন সালমান।

অন্যদিকে মাসুদ পেজেশকিয়ান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে বলেন, আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ইহুদিবাদী সরকার (ইসরায়েল) আমরা যেখানে কিছু অর্জন করতে চেয়েছিলাম প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ও নাশকতা সৃষ্টি করেছে।

উল্লেখ্য, ইরান ও সৌদি আরব ২০২৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে চালু করার ঘোষণা দেয়। ওই সময় থেকে দেশ দুটির সম্পর্কে শীতলতা কাটতে শুরু করে।

সম্মুখ যুদ্ধে ইসরায়েলকে মোকাবিলা করার জন্য ইরানের সামরিক বাহিনী প্রস্তুত। এক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রতি কোনো দয়া প্রদর্শন করা হবে না— এমন মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

শুক্রবার (১৩ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

খামেনি বলেন, ইরানে হামলা করে জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী একটি বড় ভুল করেছে। এটি একটি গুরুতর অপরাধ এবং চরম বেপরোয়া আচরণের বহিঃপ্রকাশও। এই হামলার ফলাফল হবে গুরুতর এবং জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের হামলায় ইরানে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের রক্ত এদেশের জনগণ বৃথা যেতে দেবে না। ইরান নিজেদের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশও সহ্য করবে না। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত। দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের পাশে আছেন।

তিনি আরও বলেন, এই অশুভ, ঘৃণ্য এবং সন্ত্রাসী জায়নবাদীদের শক্ত জবাব দেয়ার সময় এসেছে। তাদের প্রতি কোনো দয়া দেখানো হবে না।স

উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ অন্তত ৮টি শহরে বড় ধরনের বিমান হামলা করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী (আইএএফ)। ইরানের পরমাণু প্রকল্প ও সামরিক বাহিনীর স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে এ হামালা চালানো হয়েছিল। পরে পাল্টা হামলা চালায় তেহরানও।

গতকাল রাতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির পর আবারও নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইরান। শনিবার সকালে তেলআবিব ও জেরুজালেমে নতুন করে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়ে আহ্বান জানিয়েছে। এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকার কথা জানিয়েছে।

ইসরায়েলের উত্তরে সাইরেন বাজছে। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে যে রকেটগুলো ইরান থেকে আসছে।

এদিকে পরমাণু ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনাকে অর্থহীন বলে আখ্যা দিয়েছে ইরান। ইরানে হামলার জন্য তারা ওয়াশংটনের সমর্থনকে দায়ী করছে।

ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় হামলার জেরে গতকাল রাতে তেলআবিবে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তেহরান। এতে ৪০ জনের বেশি ইসরায়েলি নাগরিক আহতের পাশাপাশি প্রাণহানি হয়েছে একজনের। দুই দেশের সংঘাতের মাঝেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, ভারতের পাশাপাশি তিনি জার্মান চ্যান্সেলর, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এছাড়া শিগগিরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও কথা বলবেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে নরেদ্র মোদি বলেন, নেতানিয়াহু ফোন করেছিলেন। তিনি (নেতানিয়াহু) সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। এই ইস্যুতে আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছি এবং দ্রুত পশ্চিম এশিয়াতে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছি।

এর আগে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার পর গভীর উদ্বেগের কথা জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে দুই দেশকেই উত্তেজনাকর পদক্ষেপ এড়িয়ে চলারও আহ্বান জানানো হয়।cdv 

দীর্ঘ ১৩ বছর পর রাশিয়ার শীর্ষ শত্রুর তালিকা থেকে ৪ নম্বরে নেমে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের আশায় রাশিয়ার বেশিরভাগ নাগরিক এখন আর যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের দেশের প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে না। গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) প্রকাশিত লেভাডা সেন্টারের এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। এক প্রতিবেদনে রুশ সংবাদমাধ্যম মস্কো টাইমস এ তথ্য জানায়।

এ বছর রাশিয়ার প্রতি সবচেয়ে শত্রুভাবাপন্ন দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করা উত্তরদাতাদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমে ৪০% হয়েছে, যা ২০২৪ সালে ছিল ৭৬%।

রুশ উত্তরদাতাদের মতে, এখন সবচেয়ে শত্রুভাবাপন্ন দেশের তালিকায় শীর্ষ তিনে আছে জার্মানি (৫৫%), যুক্তরাজ্য (৪৯%) এবং ইউক্রেন (৪৩%)।

এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর, যিনি নির্বাচনী প্রচারে ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মার্চ মাসে, রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দ্বিগুণ বেড়েছে বলে লেভাডা সেন্টার জানিয়েছে।

গত কয়েক মাসে রুশ রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ট্রাম্পকে মস্কোর সাথে সংলাপে আগ্রহী একজন ব্যবহারিক নেতা হিসেবে চিত্রিত করেছে। একই সময়ে, ঐতিহাসিকভাবে বৈশ্বিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মনোভাব ওঠানামা করেছে।

২০০৮ সালে রুশ-জর্জিয়ান যুদ্ধের পর বুশ প্রশাসন মস্কোর কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে এবং জর্জিয়াকে মানবিক সহায়তা পাঠালে রুশদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক ধারণা ব্যাপকভাবে কমে যায়। তবে, লেভাডার তথ্য অনুযায়ী, পরবর্তীতে এই ইতিবাচক মনোভাব ফিরে আসে এবং তিন বছর পর ৬৩% এ পৌঁছায়।

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি রাশিয়ার সমর্থনের পর একই রকম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যার জেরে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

লেভাডা সেন্টারের সর্বশেষ জরিপে রাশিয়ার ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও মিত্র’ দেশ হিসেবে উত্তরদাতাদের তালিকায় উঠে এসেছে বেলারুশ (৮০%), চীন (৬৪%), কাজাখস্তান (৩৬%), ভারত (৩২%) এবং উত্তর কোরিয়া (৩০%)।

গত বছরের তুলনায় এই তালিকায় বিশেষ পরিবর্তন না এলেও, উত্তর কোরিয়ার নাম উল্লেখ করা উত্তরদাতাদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। রুশ রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার দাবি অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনীয় দখলদার বাহিনী থেকে রাশিয়ার কার্স্ক অঞ্চল ‘মুক্ত’ করতে সাহায্য করেছিল।

অন্যদিকে, ইরানকে প্রধান মিত্র হিসেবে উল্লেখ করা উত্তরদাতাদের সংখ্যা ২০২৪ সালের ২২% থেকে কমে ১১% হয়েছে।

লেভাডা সেন্টার গত ২২ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৬শ’ ১৩ জন রুশ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে এই জরিপটি পরিচালনা করে।

এই প্রতিবেদনের একটি পূর্ববর্তী সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছিল যে লেভাডা সেন্টারের মতে, ২০ বছরে প্রথমবারের মতো রুশদের প্রধান শত্রু দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষস্থান হারিয়েছে। বাস্তবে, ২০১২ সাল বা ১৩ বছর পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র এই তালিকায় প্রথম স্থানে নেই। এই ভুলটি সংশোধন করে প্রতিবেদনটি আপডেট করা হয়েছে।

কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে তিনবার গুলি করা হয়েছে, যার মধ্যে তার মাথায় গুলি লাগে দুই বার। তার নাম মিগুয়েল উরিবে টারবে (৩৯)। তিনি দেশটির রাজনৈতিক দল ‘সেন্ট্রো ডেমোক্রেটিক পার্টি’র সাথে জড়িত।

শনিবার (৭ জুন) একটি পার্কে বক্তৃতা দেয়ার সময় আক্রমণের শিকার হন তিনি। স্থানীয় গণমাধ্যমের সূত্রমতে, ঘটনাস্থল থেকে ১৫ বছর বয়সী এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (৮ জুন) সকালে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

অনলাইনে শেয়ার করা ফুটেজে দেখা যায়, বক্তৃতার মাঝখানে যখন তাকে মাথায় গুলি করা হয়েছিল। তখন উপস্থিত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, প্যারামেডিকদের মতে তার হাঁটুতে এবং মাথায় দু’বার গুলি করা হয়েছে। পরে তাকে সান্তে ফে ক্লিনিকে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তার সমর্থকরা জাগরণের জন্য বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন।

উরিবের স্ত্রী মারিয়া ক্লডিয়া তারাজোনা জানান, মিগুয়েল বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ সময়, তিনি জাতির কাছে তার স্বামীর জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধও জানান।

উরিবের ‘সেন্ট্রো ডেমোক্রেটিক পার্টি’ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ‘কলম্বিয়ার গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা’ বিপন্ন করে তুলেছে।

অপরদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই গুলিবর্ষণের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং একে ‘গণতন্ত্রের জন্য সরাসরি হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখ্য, উরিবে আগামী বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। তিনি কলম্বিয়ার একটি বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য, যার সম্পর্ক রয়েছে দেশটির লিবারেল পার্টির সাথে। তার বাবা ছিলেন একজন ইউনিয়ন নেতা এবং ব্যবসায়ী। আর তার মা ডায়ানা টার্বে ছিলেন একজন সাংবাদিক।

মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। এরইমধ্যে তাবুর শহর হিসেবে পরিচিত মিনায় পৌঁছাতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা। এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ এ তথ্য জানায়।

নিয়ম অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার (৭ জিলহজ) সন্ধ্যার পর মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারাম বা নিজ আবাসন থেকে হজের নিয়ত করে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন হজযাত্রীরা।

ইতিমধ্যে ‘তাবুর শহর’ খ্যাত মিনায় পৌঁছেছেন লাখো মুসল্লি। সৌদি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৪ লক্ষাধিক হাজী মিনায় অবস্থান করছেন। ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে মুখরিত মিনা উপত্যকা, যা হজের পবিত্র আবহকে আরও গভীর করছে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতেই ইহরাম বেঁধে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা হন ধর্মপ্রাণ অনেক মুসলমান। রাত্রি যাপন শেষে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রওনা হবেন আরফাতের ময়দানের উদ্দেশে। সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে হজের খুতবা।

আরাফাতে অবস্থানকেই মূলত হজ হিসেবে ধরা হয়। এবার বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লী হজ পালন করছেন। মুসল্লিদের হজ পালন নির্বিঘ্ন করতে কড়া নিরাপত্তাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতাগুলো সম্পন্ন করা হয়। এ সময়ের মধ্যে হজযাত্রীরা চার দিনের বিভিন্ন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন।

সৌদি আরবের ধর্মীয় বিষয়ক প্রেসিডেন্সি রবিবার (২৫ মে) ঘোষণা করেছে যে এ বছর হজে আরাফার দিনের ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করবেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শেখ সালেহ বিন হুমাইদ।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমানে তাকে আরাফাহর দিনে খুতবা দেয়ার অনুমোদন দেন। আগামী ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবাহ দেবেন তিনি।

পাকিস্তানের করাচির একটি কারাগার থেকে স্থানিয় সময় সোমবার (২ জুন) রাতে ২শ’-এর বেশি বন্দি পালিয়ে গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তা ও পুলিশ জানিয়েছেন, দেশটিতে একাধিক ভূমিকম্পের পর আতঙ্কে বন্দিদের তাদের নিজ নিজ সেল থেকে বের হতে দেয়া হলে সুযোগ বুঝে তারা জেল গার্ডদের ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

দেশটির প্রাদেশিক আইনমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লঞ্জার মঙ্গলবার (৩ জুন) ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ভূমিকম্পের কম্পনের কারণে জেল কর্তৃপক্ষ বন্দিদের মালির জেলা কারাগারের আঙিনায় নিয়ে যাওয়ার পর রাত ১২টার আগেই পালানোর ঘটনা শুরু হয় এবং তা মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলতে থাকে।

পুলিশ জানায়, কয়েদিরা জেল কর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় এবং গুলিবিনিময়ের পর মূল গেট ভেঙে প্যারামিলিটারি বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যায়। .

প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান গোলাম নবী মেমন বলেন, এতে অন্তত একজন কয়েদি নিহত ও তিনজন গার্ড আহত হয়েছেন।

কারাগারের বিপরীতের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা কর্মী বখ্শ বলেন, ‘আমি বেশ কিছুক্ষণ গুলির শব্দ শুনেছি, তারপর কিছুক্ষণ পর দেখি কয়েদিরা সব দিকে ছুটে পালাচ্ছে।

তিনি এও বলেন, কিছু কয়েদি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে আবাসিক কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেছিল।

মঙ্গলবার (৩ জুন) কারাগার পরিদর্শনকালে একজন রয়টার্স প্রতিবেদক ভাঙা কাচ ও ক্ষতিগ্রস্ত ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম দেখতে পান। কয়েদিদের পরিবারের সাথে দেখা করার একটি কক্ষ লুটপাটের শিকার হয়েছিল। উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজনরা কারাগারের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন।

লঞ্জার বলেন, এটি পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জেল পালানোর ঘটনাগুলোর একটি। করাচির মালির জেলাটিতে ৬,০০০ কয়েদি রয়েছে।

স্থানীয় টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, সারারাত ধরে কয়েদিরা এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছিল, কেউ কেউ খালি পায়ে, আর পুলিশ তাদের পিছু নিয়েছিল। প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ বলেন, পালানো কয়েদিদের মধ্যে প্রায় ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে।

জেল সুপারিনটেন্ডেন্ট আরশাদ শাহ সাংবাদিকদের বলেন, রাতে ২৮ জন জেল গার্ড ডিউটিতে ছিলেন এবং এতো বিপুল সংখ্যক কয়েদির মধ্যে মাত্র কয়েকজন পালাতে পেরেছে।

তবে তিনি স্বীকার করেন যে ওই কারাগারে নিরাপত্তা ক্যামেরা নেই।

জেল কর্মকর্তারা জানান, অনেক বন্দি হেরোইন ব্যবহারকারী ছিল এবং ভূমিকম্পের কারণে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। লঞ্জার বলেন, ‘ভূমিকম্পের কম্পনের কারণে এখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’

প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েদিদের সেল থেকে বের হতে দেয়া জেল কর্তৃপক্ষের একটি ভুল ছিল। তিনি এখনও পালিয়ে থাকা কয়েদিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান, নতুবা জেল ভেঙে পালানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হবে। শাহ বলেন, ‘ছোট অপরাধের অভিযোগও সন্ত্রাসবাদ মামলার মতো বড় হয়ে দাঁড়াবে।’