জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমনকি সংবিধান বাতিল করে গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে।

আজ মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ১১টায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, আবু সাঈদ আমাদের দ্রোহের প্রতীক। তার কবরের পাশ থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখি। আমরা আবু সাঈদের কবর ছুঁয়ে শপথ করছি— যতক্ষণ না নতুন বন্দোবস্তের ভিত্তিতে, মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠিত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে দেশ গড়ার জুলাই পদযাত্রার সূচনা আমরা করলাম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে। হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ ও রক্তদানের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করেছি। এজন্য অবশ্যই পুরনো কাঠামো ভেঙে নতুন বন্দোবস্ত নির্মাণ করতে হবে, মৌলিক সংস্কার আনতে হবে।

আখতার বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা হামলা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে—তাদের বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পুরনো ‘মুজিববাদী’ সংবিধান বাতিল করে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সব মিলিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করতে হবে।

এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় দরটির আহ্বায়াক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চল মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চল মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) মাহমুদা মিতু সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন।

পরে নেতৃবৃন্দ শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

কবর জিয়ারতের মাধ্যমেই শুরু হয় ‘বেশ করতে, দেশ গড়তে’ শীর্ষক জুলাই পদযাত্রা। গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ হয়ে পদযাত্রা রংপুরে পৌঁছায়। নগরীতে পদযাত্রা শেষে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। পরে তারা কাউনিয়ায় পদযাত্রায় অংশ নেবেন।

আগামী জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে বাদ দেয়া হয়েছে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও), ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি। আজ সোমবার (৩০ জুন) এই নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

নীতিমালা থেকে জানা যায়, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ের প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ভোটকেন্দ্র স্থাপন কমিটি রাখা হয়নি। ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের একক ক্ষমতা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বাদ দেয়া হয়েছে ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য কক্ষ নির্ধারণের বিষয়টিও।

২০২৩ সালের ভোটকেন্দ্র নীতিমালায় ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডিসি ও এসপিদের সমন্বয়ে একটি জেলা কমিটি গঠন করেছিল নির্বাচন কমিশন। এ কমিটির মাধ্যমেই ভোটকেন্দ্রের স্থান নির্ধারণ ও পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হতো। তবে এই কমিটিগুলোর নিরপেক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নতুন নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে ইসি।

নীতিমালা অনুযায়ী, বরাবরের মতো গড়ে ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র এবং গড়ে ৫০০ জন পুরুষ ও ৪০০ জন নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশের ৩৭১টি হাওরের সীমানা নির্ধারণ হওয়া উচিত। যেসব হাওর মাছের আধার, সেখানে সার ও কিটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এমনটা বলেছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে রাজধানীর পানি ভবনে হাওর মহাপরিকল্পনা মূল্যায়ন ও হালনাগাদ নিয়ে জাতীয় কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবসার কারণে মাছ উৎপাদন ও মৎসজীবীদের ওপর প্রভাব পড়ছে। হাওরে পর্যটন ব্যবসা নিয়েও আলোচনা করতে হবে। পরিবেশ দূষণ হয় এমন কাজ থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে।

নদীর মত হাওরও জীবন্ত সত্তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক মাসের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। মাস্টারপ্ল্যানের শর্ট ভার্সন করে জনগণের মাঝে বণ্টন করতে হবে। হাওর এলাকায় বনায়নে আলাদা বাজেট দেয়া হবে বলেও জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র দিতে না পারলে জুলাই উদযাপনে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়ার এখতিয়ার নেই।

সোমবার (৩০ জুন) বিকেল ৫টা ৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেছেন। তার এই পোস্টে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই সনদ’ দুইভাগে লেখাটি লিখেছেন।

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র হচ্ছে জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, শহীদ, আহত ও নেতৃত্বদের অবদান ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার সংজ্ঞায়ন নিশ্চিতে একটি জাতীয় দলিল যা পরবর্তীতে আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি পাবে।

৩১ ডিসেম্বর ছাত্রনেতৃত্ব জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সরকারিভাবে ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছিল। ছাত্রনেতৃত্ব তাই তাদের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছিল।
সরকার বিভিন্ন দল/পক্ষ থেকে খসড়া ঘোষণাপত্র চেয়েছিল। সেই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটা খসড়া ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছিল। সবগুলা ডকুমেন্ট মিলিয়ে একটা কমন দলিল তৈরি করার কথা ছিল যা সবপক্ষ একসাথে উদযাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করবে।

কিন্তু সরকার দুই দুইবার সময় দিয়েও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। কেনো করেনি, কোথায় বাধা পেলো তাও স্পষ্ট করে নি।

আমরা চাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এ ঘোষণাপত্র জারি করা হউক, যা পরবর্তীতে সংবিধানে যুক্ত করার কমিটমেন্ট থাকবে। কিন্তু সরকার যদি কোনো উদ্যোগই না নেয় আমরা বসে থাকবো না। আমাদের বক্তব্য, আমাদের ইশতেহার অবশ্যই আমরা প্রকাশ করবো। অন্য সকল পক্ষকেও বলবো আপনাদের ইশতেহার তৈরি করুন। সকলে মিলে আমরা দলিল তৈরি করতে পারলে সরকার সেটা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে।

জুলাই ঘোষণাপত্র শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকেই পাঠ করা হবে।’

‘জুলাই সনদ’ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘জুলাই সনদে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রুপরেখা থাকবে। সংবিধানের কোন কোন যায়গায় পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমতের দলিল হবে জুলাই সনদ যেখানে সকল দল স্বাক্ষর করবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এখনো ঠিক হয় নাই গণভোট, গণপরিষদ অথবা সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে এই সনদ কার্যকর হবে।

পরবর্তী নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বাধ্য থাকবে। জুলাই-অগাস্টে জুলাইয়ে ঘোষণাপত্র ও সনদ দুইটাই দেয়া সম্ভব।’

সবশেষ এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, কোনো একটি পক্ষ যদি দলীয় স্বার্থে ঐক্যমত প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাহলে সরকারের উচিত ভয় না করে অন্য সকল পক্ষ ও সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা। জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র দিতে না পারলে সরকারের এখতিয়ার থাকবে না জুলাই উদযাপনে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়ার।

তিনি আরও বলেছেন, আমরা দৃঢ়ভাবে চাই ৫ আগস্ট তথা ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ রচিত হোক। সকল পক্ষ সকল ধরনের ছাড় দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করুক।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

আজ সোমবার (৩০ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে এই ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৫ মিনিটব্যাপী এ আলোচনাটি আন্তরিক, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক ছিল বলেও জানান প্রেস সচিব।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও মার্কো রুবিওর মধ্যে আলাপ হয় দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও আন্তরিক ও গঠনমূলক করতে। বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতিফলন এই ফোনালাপে ঘটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে আমার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র আছে। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বের ওপর যেভাবে কয়েক দফা হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে, তাতে এটি রাখা স্বাভাবিক। যখন সরকারি প্রোটোকল বা সিকিউরিটি থাকে না, তখন নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র রাখা হয়।’

আজ রোববার (২৯ জুন) সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের জন্য আজ ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইট ছিল। ভোরে প্যাকিং করার সময় অস্ত্রসহ একটি ম্যাগাজিন রেখে এলেও, ভুলবশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই রয়ে যায়। স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ার পর সেটি আমি আমার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করি। বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ছিল।’

আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পোস্ট

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কী করব ভাই? যদি আমার কোনো উদ্দেশ্য থাকত, তবে নিশ্চয়ই অস্ত্র রেখে আসতাম না। এখানে অবৈধ কিছু না থাকলেও, অনেকের জন্যই এটা আলোচনার খোরাক বটে।’

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘তবে চাপ দিয়ে সংবাদ সরানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ঘটনার পর আমি টিমসহ টানা ১০ ঘণ্টা ফ্লাইটে ছিলাম। ট্রানজিটে নেমে দীর্ঘক্ষণ পর অনলাইনে এসে দেখি যে এত কিছু ঘটে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে আপনারও যদি নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে, তবে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে আপনিও অস্ত্রের লাইসেন্স করতে পারেন।’

আবু সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকীতে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আশা ছিল। এখন বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে। তবে কোনও কারণে তা না হলেও আগামী মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ স্বাক্ষর করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।

রোববার (২৯ জুন) দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম দিনের বৈঠক শুরুর আগে এ কথা বলেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে ঐকমত্য কমিশন আগের জায়গা থেকে সরে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়েছে৷ এখন দলগুলোকেও কিছুটা ছাড় দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিপক্ষ নয়। আমরা একটি দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। রাজনৈতিক দলগুলোই আগামীতে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করবে। জনআকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে যাতে কেউ সংবিধান সংস্কার করতে না পারে তা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকেরই দল রয়েছে এবং থাকবে। কিন্তু অভ্যুত্থানের সময় কোনও দলের পতাকা উত্তোলিত হয়নি। সেদিন শুধু বাংলাদেশের পতাকাই উড়ানো হয়েছিল। দেশের স্বার্থে আমরা সবাই এক হয়েছিলাম। কে নেতৃত্ব দিচ্ছে বা কে পাশে আছে সে চিন্তা আমরা করিনি। ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হওয়া ও ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরির কাঠামোকে পরিবর্তন করা আমাদের লক্ষ্য ছিল।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, গত সাতদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি হলেও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে খানিকটা পিছিয়ে রয়েছি। জুলাই অভ্যুত্থানের অজ্ঞীকারের জায়গায় আমরা কতটুকু থাকতে পেরেছি? শুধু ব্যক্তি বা দলের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হবে নাকি রাষ্ট্র ও দেশের স্বার্থকে আমরা আরেকটু বিবেচনা করব, তা ভাবতে হবে।

যানজট ও জনদুর্ভোগ এড়াতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীরা সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

গতকাল শনিবার (২৮ জুন) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্র এলাকার যানজট ও জনদুর্ভোগ লাঘবে পরীক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকেই কেন্দ্রে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তবে পরীক্ষাকক্ষে প্রবেশ ও পরীক্ষাসংক্রান্ত অন্যান্য পূর্বনির্ধারিত নিয়মাবলী বহাল থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্দেশনাটি ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন সব কেন্দ্রের জন্য প্রযোজ্য। এ সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এবার ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে প্রায় ১২ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন ১৯ হাজার ৭৫৯ জন। এছাড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার হয়েছেন ৪৩ জন শিক্ষার্থী। বোর্ডের প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলবে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত। আর ব্যাবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত।

অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে সারাদেশে ১ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রোববার (২৯ জুন) দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ ট্যাগলাইনে হবে এ কর্মসূচি। আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে। ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস এবং ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার ইশতেহার পাঠ করা হবে। এছাড়া ৫ আগস্ট উদযাপন করা হবে ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস।

নাহিদ ইসলাম বলেন, মাসব্যাপী তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা আহত হয়েছিলেন তাদের কাছে যাবেন। যাবেন শহীদ পরিবারের কাছে। অন্য যারা সহযোদ্ধা ছিলেন, তাদের কাছে যাবেন। সবার কাছে শুনবেন জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে আকাঙক্ষার কথা।

এ সময়, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এনসিপি আহ্বায়ক। বলেন, জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা কারও মুখাপেক্ষী নয়। প্রয়োজনে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহনকারীদের নিয়ে ঘোষণাপত্র দেয়ার কথা জানান নাহিদ ইসলাম।

নির্বাচনের আগে বিচারের রোডম্যাপ দেয়ার দাবিও জানান তিনি। নাহিদ বলেন, যারাই ক্ষমতায় আসুক সেখানে বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। সারজিস আলম ও অনিক রায়কে প্রধান করে উদযাপন কমিটিও ঘোষণা করে এনসিপি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম দিনের বৈঠক আজ রোববার (২৭ জুন) অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকটি শুরু হবে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। সংস্কার প্রস্তাবের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আজ আলোচনা হবে।

এর আগে, দ্বিতীয় পর্যায়ের ৬ দিনের বৈঠকে ৯টি এজেন্ডা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়। সবশেষ গত বুধবারের বৈঠকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়।

একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন এমন প্রস্তাবনায় সম্মতি জানিয়েছে বিএনপি। তবে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমাতে রাজি নয় দলটি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য আলাদা কমিটি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে তারা। এদিকে, সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত।

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রশ্রয়দাতারা দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

শনিবার (২৮ জুন) দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ অভিযোগ করেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ লেখেন, মুরাদনগরের সকল আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, পুনর্বাসন এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে যারা ছেড়ে দিয়েছেন, তারাই আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এর আগেও চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেফতার করায় তাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা-ভাঙচুর করে এক মাফিয়ার বাহিনী।

তিনি আরও লেখেন, আজকে আমি লজ্জিত, আমার বলার ভাষা নেই। এলাকার লোকজন দেখা হলেই বলে গণ-অভ্যুত্থানে দেশ মুক্ত হয়েছে। কিন্তু মুরাদনগর আরও বড় মাফিয়াদের দখলে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ধর্ষকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে মূল মাফিয়াদের লাগাম টেনে না ধরা গেলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

গত শুক্রবার (২৭ জুন) ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় অভিযুক্ত ফজর আলীকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। এরইমধ্যে ভিডিও ভাইরাল করা তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তবে গ্রেফতারকৃতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

কুমিল্লার মুরাদনগরে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নিজেই বাদী হয়ে শুক্রবার (২৭ জুন) মুরাদনগর থানায় অভিযুক্ত ফজর আলীকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা করেছেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

রোববার (২৯ জুন) রাত দেড়টার দিকে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার আরও জানান, ২৬ জুন রাত ৮টার দিকে মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর পাঁচকিত্তা গ্রামের ফজর আলী একজন প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে এলাকার লোকজনের হাতে আটক ও প্রহৃত হন। পরবর্তীতে আহত ফজর আলী সেখান থেকে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু লোক তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। 

সংবাদ পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করে। ভিকটিমের লিখিত এজহারের ভিত্তিতে মুরাদনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করা হয়। 

এ ঘটনায় মুরাদনগর থানা পুলিশ অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেফতারপূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ঘটনার ভিডিও ধারণ করে যারা সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে তিনজনকে ই্তোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত তিনজনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সুপার। তবে গ্রেফতারকৃতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী দুই সন্তানের জননী। তার স্বামী দুবাই প্রবাসী। আর অভিযুক্ত ফজর আলী বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামের পূর্বপাড়ার শহীদ মিয়ার ছেলে।