• Colors: Blue Color

ইরানের পারমাণবিক হুমকি ‘প্রশমনের’ জন্যই যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এ সময় তিনি ইরানকে আবারও আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানান তিনি। খবর বিবিসির।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না এবং এই হুমকি প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এখনও অস্থির। ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা ইরানকে আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি, যেন কূটনৈতিকভাবে এই সংকটের অবসান ঘটানো যায়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একদিন থাকবেন না। কিন্তু ইরান ঠিকই থাকবে। এমন কথা বলেছেন, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও দেশটির নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ।

শনিবার (২২ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইরানের পক্ষে এমন কথা বলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এ ঘনিষ্ঠ মিত্র।

তিনি দখলদার ইসরায়েলের ‘গোপন’ পারমাণবিক কার্যক্রমেরও সমালোচনা করেন। মেদভেদেভ বলেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধানে ইসরায়েলের এসব ‘গোপন’ কার্যক্রম পরিত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেন, কেন তেলআবিবের জন্য পারমাণবিক কার্যক্রম ভালো। কিন্তু তেহরানের জন্য ভালো নয়। নেতানিয়াহু একদিন বিদায় নেবে। কিন্তু ইরান থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের উত্তরাঞ্চলে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ইরানের সেমনান শহরের প্রায় ৩৭ কিলোমিটার (২৩ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরতায় এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।

একদিকে ভূমিকম্প, অন্যদিকে একই সময়ে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দেশটির বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা ইরানিদের জন্য একযোগে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ডেকে এনেছে।

এখনও পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু ভবন হালকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইরানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (রেড ক্রিসেন্ট) এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে।

ইরানের বেশ কিছু শহরে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় ভূমিকম্প পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির উদ্ধারকর্মীরা।

সূত্র: তাসনিম নিউজ এজেন্সি, ব্যারন্স, গালফ নিউজ, আল-আরাবিয়া নিউজ

ইরান–ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে ইসরায়েল অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউজার্সিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। খবর টাইমস অব ইসরায়েল।

এমনকি ইসরায়েলকে এ মুহূর্তে হামলা বন্ধ করতে বলা তার জন্য কঠিন হবে বলেও মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প বলেন, এই মুহূর্তে হামলা থামাতে বলাটা কঠিন। কেননা যুদ্ধে কেউ এগিয়ে থাকলে তাকে থামানো, হারতে থাকা পক্ষকে থামানোর চেয়ে কঠিন। তবে আমরা ইরানের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত এবং সক্ষম—ইরানের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলছে।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধে ইসরায়েল ভালো করছে, অন্যদিকে ইরান কম ভালো করছে। এ অবস্থায় কাউকে থামাতে বলা একটু কঠিন।

এর আগে গত শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর সিএনন’র।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেয়া যাবে না।

চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন হামলা চালানোর এখতিয়ার আছে কি না— এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, একমাত্র কংগ্রেসের হাতে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা থাকলেও, ইতিহাস বলছে, বিগত সময়ে অনেক প্রেসিডেন্টই কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নিয়েছেন সামরিক পদক্ষেপ।

এবার ট্রাম্প যাতে এ ধরনের উদ্যোগ না নিতে পারেন, তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন কিছু মার্কিন কংগ্রেসম্যান। কারণ তারা মনে করছেন, এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়। আর সাংবিধানিকভাবে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া, একতরফাভাবে প্রেসিডেন্টের কোনো সামরিক পদক্ষেপ সমর্থন করেন না তারা।

মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোনোভাবেই উচিত নয় ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানো। আর যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই, এ ক্ষমতা আছে শুধুমাত্র কংগ্রেসের। ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি সকল যুদ্ধ বন্ধ করতে এসেছেন, শুরু করতে নয়। তাই এ নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রতিদিনই বিতর্ক চলছে।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি ও ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রো খান্না হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি যৌথ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে বলা হয়, কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া ইরানে কোনো সামরিক অভিযান চালাতে পারবেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে রয়েছে প্রস্তাবটি, যেখানে ১৫ দিনের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নিলে সরাসরি ভোটের জন্য হাউসে উঠবে এটি। প্রস্তাবটি পাশ হলে, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানে বড় কোনো সামরিক হামলা বা যুদ্ধ শুরু করতে পারবেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

তবে শুধু সাংবিধানিক বাধা-ই নয়, ইরানে হামলা না করতে মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের পাশাপাশি ব্যবসায়িদের পক্ষ থেকেও চাপ বাড়ছে ট্রাম্পের ওপর। এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে ক্ষতির মুখে পড়বে সারা বিশ্বের অর্থনীতিও।

সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিলিপ ইনগ্রাম বলেন, ইরানে যদি যুক্তরাষ্ট্র অভিযান শুরু করে, তাহলে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল ও গ্যাসের বাণিজ্য হয় এ পথে। আর তা বন্ধ হয়ে গেলে হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি।

প্রসঙ্গত, অতীতে সরাসরি প্রেসিডেন্টের নির্দেশে কোরীয় এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইরান-ইসরায়েল ইস্যুতে তাদের প্রত্যক্ষ অবস্থান নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

আমাদের অনুসরণ করুন

 

সর্বাধিক পড়ুন

  • সপ্তাহ

  • মাস

  • সব