জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ করে যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে, তা বাতিলসহ চার দাবিতে আন্দোলন করছে সংস্থাটির কর্মীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবারও (২৬ মে) কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।

এরপর আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সব সংশোধনীসহ অধিকাংশ দাবির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একমত হওয়ায় আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।

আজ রোববার (২৫ মে) এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এক সূত্র থেকে বিষয়টি জানা যায়। 

গত ১২ মে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এরপর কলম বিরতিসহ টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।

এর আগে, এদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর প্রধান কার্যালয়ের নিচে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়– রাজস্ব ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী সংস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার কী কারণে এখন বাস্তবায়ন করছে না, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। মূল চারটি দাবির সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের চারটি প্রধান দাবি হলো— ১. ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০২৫’ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ২. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। ৩. রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ৪. এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশের আলোকে অংশীজনদের মতামত নিয়ে টেকসই রাজস্ব সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি বিকেল ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রবেশ করেন। বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি যমুনা ত্যাগ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে যমুনায় প্রবেশ করেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। দুই দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আজ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার (২৫ মে) বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে প্রথম দফার বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়া নেতারা যমুনায় প্রবেশ করেন।

প্রথম দফায় দেখা করছেন ১১ জন। তারা হলেন, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম, মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকী, হাসনাত কাইয়ুম, মুজিবর রহমান মঞ্জু, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, টিপু বিশ্বাস, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

সন্ধ্যা ৬টায় দ্বিতীয় দফার বৈঠকে অংশ নেবেন মাওলানা সাদিকুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, নুরুল হক নূর, মাওলানা মুসা বিন ইজহার ও মুফতি মাওলানা শাখাওয়াত হোসাইন রাযি।

শেষ সময়েও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং আরও রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা—আদালতে এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

রোববার (২৫ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদালতে শুনানিতে বিচারকদের সামনে লিখিতভাবে এ তথ্য পড়ে শোনান তিনি।

এদিন ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সকল ভূমিকা আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর।

তিনি বলেন, পদত্যাগ করতে ৫ আগস্ট গণভবনে শেখ হাসিনার পা ধরেছিলেন শেখ রেহানা। পরে পরিবারের সদস্যরা বোঝালে তিনি পদত্যাগ করেন।

পরে আদালত প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব—শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। আন্তর্জাতিক মানের বিচার করতে এবং অপরাধ প্রমাণে যত তথ্য প্রয়োজন, সবকিছু প্রসিকিউশনের কাছে আছে।

বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ মানবিক করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর, সংস্কার, বিচার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এক দীর্ঘ চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

শনিবার (২৪ মে) বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিটি গণমাধ্যমের হাতে আসে।

এতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারকে শিগগিরিই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।  

প্রধান উপদেষ্টা বরাবর বিএনপির চিঠিতে যা বলা হয়েছে  

দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অগণতান্ত্রিক বর্বরতম ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীন ও সামাজিক ন্যায়বিচার-ভিত্তিক একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের মানুষ আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) নেতৃত্বে একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ফ্যাসীবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে তা একটি বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। অথচ আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা। কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সচেতন থাকা উচিত ছিল। এই বক্তব্য আমরা আপনার সামনে বারবার উচ্চারণ করেছি। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে জনমনে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

আরও বলা হয়, মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থে রক্ষিত হচ্ছে কি না সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল। এছাড়াও এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী অস্থায়ী সরকারের আছে বলে এ দেশের জনগণ মনে করে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যাতে দেশে অস্থিতিশীল কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত কেবল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়াই সমীচীন।

কয়েকজন উপদেষ্টার বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ,  অন্তর্বর্তী সরকারের যে সমস্ত উপদেষ্টারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বোঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বিতর্কিত হয়েছেন, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন ঘেরাও ঘটনার বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা স্বত্বেও একই বিষয়গুলো নিয়ে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদেরকে এবং সরকারকে বিব্রত করে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায়। সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সকল পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে এই কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে। সুতরাং আমাদেরকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আশা করব অতি শিগগিরই সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পক্ষপাতমূলক আচরণ সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে।

নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।

জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে, জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাসম্ভব জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দারি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জন-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসাবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। আমরা যে বিষয়গুলো এই চিঠিতে উল্লেখ করেছি সেগুলো আমাদের আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মত উপেক্ষিত হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক এবং অনিবার্যভাবেই তা আমাদেরকে সরকারকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে পরামর্শ দিতে নিরুৎসাহিত করবে।

সবশেষে উল্লেখ করা হয়, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে সরকার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।

সাম্য, প্রেম ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। ১৮৯৯ ইংরেজি ও ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম এই বিরল প্রতিভা। কে জানতো ঝাঁকড়া চুলের সেই দুখু মিয়া হয়ে উঠবে বাংলার বিদ্রোহী কবি?

রোববার (২৫ মে) নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। দিনটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে কবির সমাধিতে যাবেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মরতরা। সেখানে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন তারা।

এদিকে, জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ রোববার (২৫ মে) শুরু হয়ে আগামী মঙ্গলবার (২৭ মে) পর্যন্ত চলবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং কবির নাতনী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিলখিল কাজী উপস্থিত থাকবেন।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা করবেন। পাশাপাশি স্বাগত বক্তৃতা দেবেন জেলা প্রশাসক  মো. আমিরুল কায়ছার।অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।

নজরুলকে কেউ বলেন প্রেমের কবি, কেউ বলেন দ্রোহ আর বিদ্রোহের। কারো কাছে মানবতার কবি নজরুল, গান গেয়েছেন সাম্যের। প্রাণের কবি, গানের কবি-এমন নানা নামে ডাকে সাধারণ। গবেষকরা বলছেন, নির্দিষ্ট কোন গণ্ডি নয়, নজরুলের বিস্তৃতি সর্ব পরিসরে। সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে লিখেছেন অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও গান।

১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা। ‌’আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য নজরুলকে দেয়া হয় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। মাত্র ২২ বছর ব্যাপ্তির লেখক জীবনে রচনা প্রায় ৪ হাজার গান, অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প আর উপন্যাস। সাহিত্যের পাশাপাশি করেছেন সংগীত ও চলচ্চিত্র পরিচালন, এমন কী অভিনয়ও। বর্ণাঢ্য জীবনে জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।

স্বাধীনতার পরের বছর কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। দেয়া হয় জাতীয় কবির সম্মান। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন প্রিয় কবি। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

কবি না থাকলেও তার অমর কবিতা, গান এখনও প্রেরণা যোগায় অন্যায়-জুলুম আর শোষণের শেকল ভাঙার। কবি যেন আগে থেকেই অনাগত ভবিষ্যৎ জানতেন। চারপাশে সাম্প্রতিক যে অস্থিরতার চিত্র আমরা খুঁজে পাই, তাতে নজরুলের মহাকালছেদী প্রতিবাদী কণ্ঠ বড় প্রয়োজন।

শেখ হাসিনার আমলে হওয়া জাতীয় এবং স্থানীয় সকল নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেই সময়ে বিরোধী দলগুলোও এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছিল। এমন মন্তব্য করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

শনিবার (২৪ মে) প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান। 

তিনি বলেন, প্রথমেই সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছি। বলা হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের যে দায়িত্ব থেকে তিনি সরকারে এসেছিলেন তা যেন তিনি রক্ষা করেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ দিন সময়ও দেয়া হয়েছিলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাতে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হয় এমন দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

নাহিদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে আগাচ্ছে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে যে সঞ্চয়পত্র দেয়ার কথা ছিল তা অনেক শহীদ পরিবার পায়নি এবং মাসিক ভাতা দেয়াও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব দাবি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে হওয়া জাতীয় এবং স্থানীয়ত সকল নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছিল। সেই সময়ের বিরোধী দলগুলোও বিভিন্ন সময়ে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই নির্বাচনকে আদালতে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এজন্য যাতে আইনগতভাবে এসব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

এনসিপির এই নেতা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা নির্বাচন কমিশইনের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। এটি পুনর্গঠন করে যাতে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিচার, স্থানীয়-গণপরিষদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ এই তিনটির সমন্বয়ে একটি রোডম্যাপ যাতে সরকার গঠন করে সেই দাবি জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে তিনি বলেন, গণ অভ্যুত্থানের চেতনা নিয়ে তারা সরকারে গিয়েছে। তাদের মামাদের সাথে মিলিয়ে ফেলায় নিন্দাও জানানো হয়েছে। এটিকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যমূলক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কটূক্তির মামলায় জামালপুরে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে আদালত।

শনিবার (২৪ মে) বিকেলে সরিষাবাড়ী আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুকসানা পারভীন মামলাটি আমলে নিয়ে ডা. মুরাদ হাসানসহ দু’জন আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে পানসিয়ানা নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এ ধরনের মন্তব্য করায় ১০ হাজার কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জামালপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সরিষাবাড়ীর ট্রাক মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা রুমেল সরকার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এই মামলায় মহিউদ্দিন হেলাল নামে ইউটিউব চ্যানেলটির উপস্থাপককেও আসামি করা হয়েছে। মামলাটির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৯ জুন। সেদিন আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মামলার বাদী রুমেল সরকার বলেন, মুরাদ হাসান অনেক মানুষকে নির্যাতন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি গ্রেফতার হননি। এ সময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মামলায় আদালত সমন দিয়েছেন। আগামী ১৯ জুন ডা. মুরাদ হাসানসহ দুই আসামিকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। যথাসময়ে উপস্থিত না পারলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতে পারে বলেও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় আবারও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সেইসাথে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিও জানানো হয়।

শনিবার (২৪ মে) রাতে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে এসব কথা জানায় বিএনপির প্রতিনিধি দল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সংস্কার ও বিচার কাজ নিয়ে বিএনপির মধ্যে কোন দ্বিধা নেই। আওয়ামী লীগের সময় সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও নিপীড়িত দল বিএনপি। ক্ষমতায় গেলে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার করা হবে বলেও জানান তিনি। সেইসাথে ৩১ দফার আলোকে সংস্কার কার্যক্রমের কথাও জানান খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নিরাপত্তা ও দুই ছাত্র উপদেষ্টার কারণে সরকার এখন বিতর্কিত। তাই তাদের পদত্যাগ চায় বিএনপি।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন ও সংস্কার এবং দৃশ্যমান বিচারের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। শনিবার (২৪ মে) প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে ডা. শফিকুর রহমান একথা জানান।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছিল। প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছলেন কিন্তু তা দেননি। ফলে সমাজে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়ে। পুরো পরিস্থিতি প্রধান উপদেষ্টার জন্য কিছুটা কষ্টের ও বিরক্তির ছিলো। দেশ আমাদের সবার দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই বিপ্লবে দেশে পরিবর্তন এসেছে কিন্তু এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের পরিচয় হলো তারা কোনো পার্টির রাজনীতি করবেন না। এটা হওয়া উচিত কিন্তু এখানেও কিছু ব্যাতিক্রম ঘটেছে। এটিও মাঝেমধ্যে সমাজকে উদ্বিগ্ন করেছে। এই বিপ্লবের অবশ্যম্ভাবী দাবি ছিল কিছু সংস্কার করা লাগবে এবং অপরাধীদের বিচার হতে হবে। এর মধ্য দিয়ে একটি অর্থবহ নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন তাদের কোনো ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হবে না। এখানে পেশিশক্তি এবং কালো টাকার প্রভাব থাকবে না এবং মানুষ ভোটের অধিকার নিশ্চিতভাবে পাবে।

আমরা বলেছি, ২টি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার একটি হলো নির্বাচন কখন হবে আর আরেকটি হলো নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার এবং বিচারের কিছু প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসতে হবে। সংস্কার শেষ করে নির্বাচন না হলে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচনের জন্য সরকারকে কোনো সময়সীমা বেশে দেয়া হয়নি । জামায়াত কণ্ব কারোর পদত্যাগ চায়নি বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমীর।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিএনপির প্রতিনিধি দল।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনেও এই তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি করা হয়। তাদের বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে তারা ‘বিতর্কিত’। আজও সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেন, এই তিন উপদেষ্টার কারণে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ণ হচ্ছে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যা অনুমান করতে পেরেছিলাম, সে অনুযায়ী আমরা একটি লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসেছিলাম। তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেছি এবং সে অনুযায়ী আমরা আলোচনা করেছি। এর সারাংশ হচ্ছে… বাংলাদেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি শুরু থেকে একটি জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ও সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেছেন, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে। এজন্য আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি বিচার দাবি করে বিএনপি। কোনোভাবে আওয়ামী লীগের বিচার অসম্পূর্ণ থাকলে বিএনপি সরকারে যখন যাবে তখন তা বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচারবিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রদানের দাবি আমরা জানিয়েছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণে একটি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, যেকোনও উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি নানা গুজব রয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে আমরা বলেছি, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং প্রথম দিন থেকে এ সরকাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে।

আজকেও কি বিএনপি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের আশ্বাস পায়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, স্পেসিফিক কোনও কথা হয়নি, স্পেসিফিক কোনও কথা জানাননি, আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তো উনারা প্রেস উইংয়ের মাধ্যমে জানাবেন। আমরা অপেক্ষা করবো।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংস্কার প্রসঙ্গে উনারা একমত হয়েছেন, যেখানে একমত হওয়ার কথা তার ভিত্তিতে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। এবং সেই কাজ অতি সহসাই সম্পন্ন সম্ভব। এখানে কোনও দ্বিমত পোষণ করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনের খবর পেয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যার পর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যার পর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে আজ বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে অনেকই অনেক কথা লিখছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে সন্ধ্যায় যমুনায় যান নাহিদ ইসলাম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে যমুনা টেলিভিশনকে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন জানান, প্রধান উপদেষ্টার কাজ করার মতো পরিস্থিতি না থাকলে তিনি তার পদে থাকার ব্যাপারটি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও লাখো মানুষের ত্যাগ সেই ত্যাগের প্রতি দায়বদ্ধতা ও পুরো দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম।

দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। 

বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে মুজিবুল আলম প্রকাশিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার বিকালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিষদ আলোচনা করা হয়।

বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।