রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার কোটায় নিজ অভিপ্রায় অনুযায়ী ভিআইপিদের ১৫ জন ড্রাইভারকে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে প্লট দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে জানায়। 

অথচ রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চার শ্রেণিতে ঝিলমিল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের কথা ছিল।

প্লট পাওয়া ১৫ ড্রাইভার হলেন— সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম লিটন, রাজন মাতবর, মাহবুব হোসেন, শাহীন, মতিউর রহমান, নুর হোসেন ব্যাপারী, বোরহান উদ্দিন, বিললা হোসেন, মিজানুর রহমান, বাচ্চু হাওলাদার, নুরুল আলম এবং নুরুন্নবী।

অভিযোগ অনুসন্ধানে গতকাল বুধবার দুদকের একটি টিম রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এসময় তারা জানতে পারে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার কোটায় এই ১৫ ড্রাইভারকে প্লট দেয়া হয়েছিল। যার সুপারিশ করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের দেয়া রায় রাষ্ট্রবিরোধী ছিল। আইন অনুযায়ী তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। দেরিতে হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় আমরা সন্তুষ্ট।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, খায়রুল হকের রায়ের পর আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এরপর দেশের সকল রাজনৈতিক সংকটের জন্য এটি দায়ী। তিনি বিচার বিভাগের প্রতি আস্থার জায়গাটিকে ধ্বংস করেছেন।

তিনি আরও বলেন, শিশু একাডেমির ভবনটি ভেঙে ফেলা ও স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা এটির বিরোধীতা করছি। কারণ ভবনটি ভেঙে ফেলা হলে তা শিশুদের মেধা ও মনন বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৩টি মামলা রয়েছে।

২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান খায়রুল হক। আপিল বিভাগে থাকাকালে সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন তিনি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সংক্রান্ত চারটি আইনের সংশোধনী অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এসব সংশোধনী অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠকের শুরুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি নিহতদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতাও পালন করে উপদেষ্টা পরিষদ। এরপর তাদের রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।

এছাড়াও বৈঠকে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার এবং আহতদের চিকিৎসায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি নিশ্চিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবে বলেও জানানো হয়।

এছাড়া, মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার নিহত দুই শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী ও মাসুকা বেগমকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানেরও সিদ্ধান্ত নেয় উপদেষ্টা পরিষদ। পাশাপাশি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে আগামীকাল শুক্রবার সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শনাক্ত না হওয়া ৬ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের মালিবাগের সিআইডি ভবনে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য নমুনা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত ১টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত সিএমএইচ-এর মর্গে রাখা ৬টি মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞরা এরইমধ্যে মরদেহগুলো থেকে ডিএনএ এনালাইসিসের (প্রোফাইলিং) জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে। অতিদ্রুত সিআইডির ল্যাবরেটরীতে ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে।

তাতে আরও বলা হয়, হতাহতদের তালিকায় যাদের সন্তান-স্বজনের নাম নেই ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের মালিবাগের সিআইডি ভবনে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য নমুনা দেয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত নিখোঁজ একজনের পরিবারের নমুনা প্রদান করেছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের নমুনা পাওয়া গেলে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই ডিএনএ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত আরও একজন শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩২ জনে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে শিশুটি মারা যায়।

নিহত শিশু নাফি (৯) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিল। তার শরীরে প্রায় ১১ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাছাড়া, চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে নাফির বড় বোন নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুমও (১৩) মারা যায়।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন পাইলট, দুই শিক্ষিকা, ২৬ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে, নিহতদের মধ্যে ৬ জনের মরদেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত না হওয়া মরদেহগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

শনাক্ত না হওয়া মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্তে নিখোজ পরিবারের সদস্যদের মালিবাগ সিআইডি ল্যাবরেটরিতে ডিএনে নমুনা দেয়ার অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।

ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনী একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্থ হওয়ার ঘটনায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে গত রাত ২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার জাতীয় বার্ণ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেছে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ ছাত্র ও রাঙ্গামাটি, রাজস্থলীর মেধাবী সন্তান উক্য চিং মারমা।
 
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া উক্যচিং মারমা মেধাবী সন্তানটি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে আজ লাশ হয়ে ফিরেছে। আর তার এই মৃত্যুতে পুরো এলাকায় বয়ে যাচ্ছে শোকের মাতব। পরিবারের কান্নার আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। কিছুতেই মানতে পারছে তার এই অকাল মৃত্যু। ভালো স্কুলে পড়তে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসছে নিজ গ্রামে।
 
মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতরাত আনুমানিক ২টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন উক্যচিং মারমা (১৪)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার পিতা উসাইমং মারমা।
 
জানা যায়, সোমবার (২১ জুলাই) বেলা ১টায় ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনী একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্থ হয়ে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেখানেই স্কুলে অবস্থান করছিলো রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের কলেজ পাড়ার ছেলে উক্যাচিং মারমা। উক্যচিং মারমা ওই স্কুলের ইংলিশ মিডিয়ামের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। এই ঘটনায় তার শরীরের শতভাগ অংশ দগ্ধ হয়।
 
আর সকালে লাশ বহনকারী এ্যাম্বলেন্স নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন আত্মীয়-স্বজন। লাশটি রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়ায় নিজ বাড়িতে আনা হয়েছে।
 
কান্নাজড়িত কন্ঠে দাদু কংহলাপ্রু মারমা (৭৫) জানান, নাতিকে এইভাবে হারাবো কখনো ভাবিনি। অত্যান্ত ভদ্র ও সুর্দশন ছিলো আমার নাতি। সে অনেক মেধাবী ছাত্র ছিলো। উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকাতে গেছিলো। কিন্তু লাশ হয়ে ফিরছে আমার নাতি। নাতির সাথে কত স্মৃতি। তার মা-বাবা খবর পেয়ে ঢাকাতে ছুটে গেছেন। আজকে নাতির মরদেহ নিয়ে আনাহয়েছে। আগামীকাল নাতিকে বাঙালহালিয়া কিউংধং পাড়ায় দাহ করা হবে বলে তিনি জানান।
 
এদিকে নাতির পুরানো ছবি দেখে বার বার বিলাপ যাচ্ছেন দাদি ক্রাপ্রুমা মারমা (৬৫)। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, নাতিকে ছোটবেলায় কোলে পিঠে আদর করে মানুষ করেছি। তারা বান্দরবান থাকলেও ছুটিতে দাদুর বাড়িতে আসতো। কত দুষ্টুমি করতো আমার নাতিটা। নাতির এই মৃত্যু আমরা কোনভাবেই মানতে পারছিনা। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো সে সামান্য আঘাত পেয়েছে কিন্তু পরে যখন নাতি উক্য চিং এর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার কথা শুনি তখন নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছিলাম। সে পড়া লেখায় খুব ভালো ছিলো। আমার নাতিটার এইভাবে মৃত্যু হবে তা আমরা কখনো কল্পনা করিনি।

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রত্যেকটিই যৌক্তিক বলে মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে ১টা ৩৩ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আজ দুপুরে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলে একটি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে নিহত ও আহতের তথ্য থাকছে। কেউ নিখোঁজ থাকলে সে তথ্য থাকছে। এখান থেকে তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। নিহত ও আহত পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পূনর্বাসন ও ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণের সময় সেনাবাহিনীর কর্তব্য পালনকালে কয়েকজন সেনাসদস্য কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর মারধরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিমানবাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও শিক্ষার্থীদের জানান আইন উপদেষ্টা।

এদিকে, আগামী বৃহস্পতিবারের (২৪ জুলাই) এইসএচসি পরীক্ষা ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করার কথা জানান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এই পরীক্ষার তারিখ নিয়মিত পরীক্ষা শেষে ঘোষণা করা হবে।

প্রসঙ্গত, মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৬টি দাবি হচ্ছে—

  • নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ
  • আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ
  • শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলার ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া
  • নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া
  • বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো উড়োজাহাজ বাতিল করে আধুনিক উড়োযান চালু করা
  • বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে আরও ‘মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা’ চালু করা

আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) যে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে। এই পরীক্ষার তারিখ নিয়মিত পরীক্ষা শেষে জানানো হবে।

আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ ঘোষণা দেন।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার মাইলস্টোনের উত্তরা ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ মঙ্গলবারের এইসএচসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনার প্রেক্ষিতে এদিন মাঝরাতে আসে পরীক্ষার স্থগিতের ঘোষণা।

এছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।

এই বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৬৫ জন।

রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের ফিউনারেল প্যারেড ও নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকার কুর্মিটোলায় ফিউনারেল প্যারেড ও নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম, সেনাপ্রধান জেলারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধানসহ নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জানাজা শেষে তিনবাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবদন করা হয়। তৌকিরের মরদেহের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন তার সহকর্মী বিমানবাহিনীর সদস্যরা।

জানাজায় অংশ নিয়ে তৌকিরের স্বজনরা সবার কাছে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। এরপর বিমানবাহিনীর সদস্য তৌকিরের মরদেহ গাড়িতে তুলে দেন। সেখান থেকে মরদেহ রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সপুরা ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে নগরীর সপুরা কবরাস্থানে দাফন করা হবে তাকে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শনে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরার।

এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দেখে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে আইন উপদেষ্টা সেখানে এলে এমন ঘটনা ঘটে।

এদিকে, নিহতদের নাম-পরিচয় প্রকাশসহ ছয় দফা দাবিতে উত্তরার দিয়া বাড়ি গোল চত্বর এলাকায় সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি হলো-

১. নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করতে হবে

২. আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে

৩. শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলা — এই জঘন্য ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে

৪. নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো প্লেনগুলো বাতিল করে আধুনিক প্লেন চালু করতে হবে

৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। নিহতদের মধ্যে একজন পাইলট ও শিক্ষিকা বাদে বাকি সবাই শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান। 

এর আগে, সোমবার (২২ জুলাই) দুপুর ১টা ১৮ মিনিটের দিকে উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের একটি ভবনে বিমান বাহিনীর এফ-সেভেন বিজেআই মডেলের যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।

এই দুর্ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সকল সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একইসঙ্গে আহত ও নিহতদের জন্য দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

মাইলস্টোন ট্রাজেডির ঘটনা তদন্তে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশও নিহতদের ৫ কোটি ও আহতদের ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। এর আগে, এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

রিটে জনবহুল এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে এবং নিহতদের পরিবারকে ৫ কোটি এবং আহতদের ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।

শুনানিতে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের এমন দুর্ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেন। বলেন, বিমান বাহিনীর এফ-৭ মডেলের বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা।।

এরপর হাইকোর্ট এ রুল জারি করেন। রিটে বিমানবাহিনীর অধীনে ত্রুটিপূর্ণ বিমানের সংখ্যা কত এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কী কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে, তা জানতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া মাইলস্টোন স্কুলের আহত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।