২০১৩ সালের ৫ মে। ইসলাম অবমাননাকারীদের শাস্তি ও নারীনীতির বিরোধীতা করে ১৩ দফা দাবিতে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ। দিনভর চলা সমাবেশে বিকেলের দিকে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন কওমী মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠনটির নেতারা। দিনভর দফায় দফায় চলে নানামুখী সংঘর্ষ।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন স্থানে জ্বলতে থাকে আগুন। হেফাজত নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে মধ্যরাতে অপারেশনের প্রস্তুতি নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাত তিনটার দিকে একদিক খোলা রেখে তিনদিক থেকে চালানো হয় অপারেশন। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়।
মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালিত অপারেশনে ঠিক কতজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন- তার সঠিক সংখ্যা এখনও নির্ণয় করতে পারেনি সংগঠনটি। যদিও নিহত ৬১ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন, অধিকার।
শাপলা চত্বরে হামলা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে দেশ-বিদেশে। সেই সময়ে এ ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের করতে পারেনি হেফাজত। উল্টো সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয় বিভিন্ন থানায়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শাপলার ঘটনাকে গণহত্যা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দু’টি অভিযোগ জমা দেয় হেফাজত। যাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, জিয়াউল আহসানসহ অর্ধশত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনার এক যুগ পর পাল্টেছে পরিস্থিতি। কিন্তু নিহতের সঠিক সংখ্যা কী নির্ণয় করতে পেরেছে হেফাজত? এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক জানান, বেশকিছু লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। চাপের মুখে অনেক পরিবার তাদের পরিবারের সদস্যের মারা যাওয়ার বিষয়টি চেপে গিয়েছেন। মে মাসের মধ্যেই নিহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও জানান, শাপলা হত্যাকাণ্ডসহ যে কয়টি হত্যাযজ্ঞ হয়েছে সব কয়টিতে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান হেফাজতে ইসলামের এই নেতা।
শাপলার ঘটনার পর ৬১ জন নিহতের একটি তালিকার কথা জানায় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। এরপরই ঘড়গ নেমে আসে সংগঠনটির উপর। তথ্য-প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করে কারাদণ্ড দেয়া হয় অধিকারের সম্পাদক ও বর্তমান উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে।
নিহতের তালিকা করতে গিয়ে কঠিন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় অধিকারের তদন্ত দলকে। অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান জানান, তথ্য অনুসন্ধান দল যখন বিভিন্ন জায়গায় যায় তখন জানতে পারে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগী পরিবারদের ওপর নানা নিপীড়ন চালাচ্ছে। তাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। সিভিল এবং পুলিশ প্রশাসনও তাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছিল।
হেফাজতের দায়ের করা মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, দুইটি অভিযোগ একসাথে করে তদন্ত কর্যক্রম চালাচ্ছে তদন্ত সংস্থা। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে একটি পিটিশন ফাইল করা হয়। এর ওপর ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ছিল। অনেকে পলাতক আছে তাদের পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।
শাপলা চত্বরের ঘটনায় আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়, যা মতিঝিল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।