ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) স্থানীয় সময় রোববার (২৭ জুলাই) ঘোষণা করেছে যে নাহাল ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের তিন সৈন্যকে যুদ্ধের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গাজায় ফিরে যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকার করায় তাদের বিরুদ্ধে ‘অনুগত্য হারানো’র অভিযোগ আনা হয়।

সৈন্যরা তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ‘গভীর আত্মিক সংকট’ (deep internal crisis)-এর কথা উল্লেখ করেছে।

কান পাবলিক ব্রডকাস্টার প্রথম এই ঘটনার কথা জানায়, যা পরে আইডিএফ নিশ্চিত করে। রিপোর্ট অনুযায়ী, নাহাল ব্রিগেডের ৯৩১তম ব্যাটালিয়নের চার সদস্য গাজায় ফেরত যেতে অস্বীকার করায় তাদের যুদ্ধ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে তিনজনকে ৭ থেকে ১২ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, চতুর্থ সদস্যের বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলছে।

সৈন্যরা তাদের কমান্ডারদের জানিয়েছিল যে, গাজায় ফিরে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, তারা যখন এই সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তাদের চিকিৎসার পরিবর্তে কারাগারে পাঠানো হয়।

একজন সৈন্যের মা কানকে বলেন, ‘তাদের অনেক সহযোদ্ধা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন, তারা ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছেন এবং মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। এসব কিছু তাদের আত্মায় দগদগে দাগ রেখে গেছে।’

আইডিএফের প্রতিক্রিয়া

আইডিএফ জানিয়েছে যে, নাহাল ব্রিগেডের এই তিন সৈন্য গাজায় যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকার করায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, সৈন্যরা একজন মানসিক স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিল, যিনি তাদের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ‘সক্ষম’ বলে রায় দিয়েছিলেন। তবে শাস্তিমূলক প্রক্রিয়ার পরও তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় তাদের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আইডিএফ বলেছে, ‘এই বিষয়টি সংবেদনশীলতার সাথে এবং নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করা হয়েছে এবং যুদ্ধের সময় আনুগত্য হারানোকে গুরুতরভাবে নেয়া হয়।’

সেনাবাহিনীতে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ ও অনাগ্রহের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেনাসদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহে চার সৈন্য (একজন রিজার্ভ সদস্যসহ) আত্মহত্যার সন্দেহে মারা গেছেন, যা এ বছরের মোট আত্মহত্যার সংখ্যা ১৯-এ পৌঁছে দিয়েছে।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল।

ইউরোপের সকল পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার, স্কটল্যান্ডে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েনের সাথে বৈঠক হয় ট্রাম্পের।

দীর্ঘ আলোচনার পর ইইউর পণ্যে ১৫ শতাংশ ট্যারিফ নির্ধারনের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে ইউরোপের সকল পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

চুক্তি অনুযায়ী, ইইউ পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্র ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, যা ট্রাম্পের পূর্বের ৩০% হুমকির অর্ধেক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা, ২৭ সদস্যের এই ব্লক যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে শূন্য শুল্কে তাদের বাজার উন্মুক্ত করবে।

ভন ডের লেনও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি উভয় মিত্রের জন্য স্থিতিশীলতা আনবে, যারা সম্মিলিতভাবে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের অংশীদার।

কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড যুদ্ধবিরতি আলোচনায় রাজি হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার (২৬ জুলাই) ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া পোস্টে তিনি বলেন, শিগগিরই সাক্ষাৎ করবেন দুই দেশের নেতারা।

এছাড়াও গতকাল উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ফোনালাপ করেন ট্রাম্প। সীমান্তে সংঘাত বন্ধ না হলে কোনো পক্ষের সাথেই বাণিজ্য চুক্তি করবেন না বলে হুমকি দেন তিনি। এরপরই আসে এমন ঘোষণা।

এদিকে মধ্যস্থতার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচি। বলেন, তার দেশ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে রাজি। কম্বোডিয়ার তরফ থেকেও একইরকম আন্তরিকতা দেখতে চান বলেও জানান।

উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে ১৩ বছরে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে তিনদিনে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ।

দীর্ঘ ৪১ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন লেবাননের আলোচিত ফিলিস্তিনপন্হি বিপ্লবী যোদ্ধা জর্জ ইব্রাহীম আব্দুল্লাহ। ফ্রান্সে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা ও ইসরায়েলি কূটনীতিককে হত্যার অভিযোগে তাকে জেলে পাঠিয়েছিল ফরাসি পুলিশ। জীবদ্দশায় আর কখনও ফ্রান্সে প্রবেশ না করার শর্তে মুক্তি দেয়া হয় তাকে।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বৈরুতের রাফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় জর্জ ইব্রাহীমকে বহনকারী বিমানটি।

দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জর্জ। ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী কেফায়া পড়ে বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।

জর্জ ইব্রাহীম বলেন, শত্রুদের প্রতিহতে আমরা জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। জীবনের শেষ পর্যন্ত শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। ইসরায়েলের অস্তিত্ব কিছুদিনের মাঝেই হারিয়ে যাবে। ওরা শেষ অধ্যায়ে পা দিয়েছে।

১৯৮৪ সালে ফ্রান্সের লিওন শহর থেকে আটক হন জর্জ ইব্রাহীম। প্যারিসে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা চার্লস রবার্ট রে এবং ইসরায়েলি কূটনীতিক ইয়াকোভ বারসিমানটোভকে হত্যার অভিযোগে তাকে আটক করে ফরাসি পুলিশ।

জর্জ ইব্রাহীম আব্দুল্লাহ ১৯৫১ সালে লেবাননের উত্তরাঞ্চলীয় কোবাইয়াত শহরে একটি খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান ফ্রান্সে। টুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়ে পড়ার সময়ই বামপন্হি ও বিপ্লবী চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হন জর্জ ইব্রাহীম। এই বিশ্বাসই তার রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তি।

লেবাননে ৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন জর্জ ইব্রাহীম। যোগ দেন পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন- জেনারেল কমান্ড’ নামের সংগঠনে। উপনিবেশবাদ বিরোধী ও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার আন্দোলনের প্রতি সমর্থনে অনুপ্রাণিত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন সাহসী এই বিপ্লবী যোদ্ধা। এরফলে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রোষানলে পড়েন তিনি।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৪১ বছর কারাবাসের পর প্রিয় নেতাকে বরণ করতে বৈরুতের রাফিক হারিরি বিমান বন্দরে জড়ো হয়েছিল শত শত মানুষ। এসময় ভক্ত-অনুসারীদের ভালোবাসায় সিক্ত হন জর্জ।

তৃতীয় দিনের মতো সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।

শনিবার ভোরে, থাইল্যান্ডের ত্রাত প্রদেশে হামলা চালায় নমপেন, তবে তা প্রতিহত করে ব্যাংকক। এর আগে অন্যদিকে, দেশ দুটির মধ্যে দুই দিন ধরে চলা সীমান্ত সংঘর্ষের পর, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে কাম্বোডিয়া।

জাতিসংঘে নিযুক্ত কাম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত চিয়া কেও বলেন, শর্তহীনভাবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে তার দেশ; এবং এই বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় নমপেন। এখনও এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি থাইল্যান্ড। এর আগে কাম্বোডিয়া সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় সামরিক আইন জারি করে দেশটি।

সংঘাতের জেরে আলোচনায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সামরিক সক্ষমতা। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের র‍্যাঙ্কিং বলছে, কম্বোডিয়ার চেয়ে সামরিক শক্তিতে যোজন যোজন এগিয়ে থাইল্যান্ড। এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী বিমানবাহিনীও ব্যাংককের। তাদের ভাণ্ডারে রয়েছে ২৮টি এফ- সিক্সটিন ফাইটার জেট। অথচ নমপেনের কাছে নেই কোনো যুদ্ধবিমানই। প্রতিবছর সামরিক খাতে কম্বোডিয়ার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অর্থ খরচ করে থাইল্যান্ড।

দু’দেশের সংঘাতের জেরে নতুন উত্তেজনা এশিয়ায়। আরও একটি যুদ্ধের শঙ্কায় বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দু’দেশের মধ্যে সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের র‍্যাঙ্কিংয়ের তথ্যমতে, সামরিক শক্তিতে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাইল্যান্ড। দেশটির অবস্থান ২৫তম স্থানে, বিপরীতে কম্বোডিয়ার অবস্থান ৯৫।

লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিসের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে সামরিক খাতে ৫৭৩ কোটি ডলার খরচ করেছে ব্যাংকক। আর এই খাতে নমপেনের বাজেট ছিল ১৩০ কোটি ডলার। কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনীতে মোট সদস্য ১ লাখ ২০ হাজারের কিছু বেশি। আর থাইল্যান্ডের সামরিক সদস্য সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।

এশিয়ার শক্তিশালী দেশগুলোর তালিকার অন্যতম থাইল্যান্ডের আর্টিলারি এবং আর্মার্ড ডিভিশন। দেশটির সমরভাণ্ডারে রয়েছে ৪০০ ট্যাঙ্ক, ২০০ সাঁজোয়া যান এবং ২ হাজার ৬০০ কামান। অন্যদিকে কম্বোডিয়ায় ট্যাংক রয়েছে ২শ আর কামানের সংখ্যা এর দ্বিগুন।

এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী বিমান বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করা হয় থাইল্যান্ডের বিমান বাহিনীকে। দেশটির কাছে ২৮টি এফ-সিক্সটিন ও ১১টি সুইডিশ গ্রিপেন যুদ্ধবিমানসহ শতাধিক সামরিক বিমান রয়েছে। তার বিপরীতে একেবারেই দুর্বল কম্বোডিয়ার বিমান বাহিনী। দেশটির কাছে নেই কোনো যুদ্ধবিমান। রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবহন বিমান এবং সামরিক হেলিকপ্টার।

প্রসঙ্গত, সেনা ও আকাশপথের পাশাপাশি থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীও বেশ শক্তিশালী। একটি বিমানবাহী রণতরী, সাতটি ফ্রিগেট ও ৬৮টি টহল জাহাজ রয়েছে তাদের কাছে। কম্বোডিয়ার কাছে আছে ১৩টি টহল জাহাজ।

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ধর্মস্থালা প্রায় আটশো বছর ধরে পরিচিত তীর্থস্থান হিসেবে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার পূণ্যার্থী এই শহরে ভিড় জমায়। ধর্মাস্থালায় অবস্থিত আলোচিত ভগবান মঞ্জুনাথের মন্দির নিয়ে এক অভিযোগের জেরে শুরু হয়েছে তোলপাড়। এমনকি গণকবর থাকার সন্দেহে আলোচিত এই ইস্যুর খবর ও তথ্য প্রচারেও এসেছে নিষেধাজ্ঞা।

স্পর্শকাতর হওয়ায় ধর্মাস্থালার এই মামলা সংক্রান্ত ৮ হাজার ৮ শ’ অনলাইন পোস্ট, ফেসবুক ও ইউটিউব কন্টেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন ব্যাঙ্গালুরুর একটি আদালত। বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সংবাদ প্রচারেও। যা নিয়েও ক্ষোভ ছড়িয়েছে ভারতজুড়ে। এরইমধ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে একটি ইউটিউব চ্যানেল। এদিকে, ঘটনার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ জুলাই। ধর্মস্থালায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন দাবি করে দলিত সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার দাবি, ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রভাবশালীদের নির্যাতনের শিকার শতাধিক নারী ও শিশুর মরদেহ তিনি মন্দির চত্বরে মাটিচাপা দিয়েছেন। দেহগুলোতে নৃশংসতার স্পষ্ট চিহ্ন ছিল বলেও অভিযোগ তার। সেখান থেকে কয়েকটি কঙ্কালও উদ্ধার হয়েছে। এরইমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। আদালত তার নাম প্রকাশ করেনি।

এমন বিস্ফোরক অভিযোগের পর ভারতজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এতদিন পর কেন এই বিতর্ক উঠেছে সে প্রশ্ন। যদিও জবানবন্দী দাতার দাবি, ২০১৪ সালে পরিবারসহ ধর্মস্থালা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অপরাধবোধ থেকেই দিচ্ছেন সাক্ষ্য।

আইনজীবী উমাপাথি এস বলেন, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় চলমান তদন্ত অসন্তোষজনক। সরকারের উচিত ছিল মামলাটি তদারকি করার জন্য একজন বিশিষ্ট এবং অভিজ্ঞ আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা। এটি একটি বা দুটি মৃত্যু বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। গণধর্ষণ, গণহত্যা এবং গণকবরের মতো গুরুতর বিষয় রয়েছে।

সাবেক ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর জবানবন্দীর পর, ২০০৩ সালে ধর্মাস্থালায় নিখোঁজ হওয়া এক শিক্ষার্থীর পরিবার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছে। এদিকে, তোপের মুখে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কর্ণাটক রাজ্য সরকার।

পৃথিবীর মানচিত্রে নেই অস্তিত্ব; ওয়েস্টার্কটিকা, সাবোরগা নামের দেশের নামও কেউ কখনও শোনেনি। এমন একাধিক দেশের রাষ্ট্রদূত সেজে অভিনব পন্থায় প্রতারণার দায়ে একজনকে গ্রেফতার করেছে ভারতের পুলিশ। ৪৮ বছর বয়সী হর্ষবর্ধন জৈন নামের ওই প্রতারক বিদেশে চাকুরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের অর্থ। ভাড়া করা আলিশান বাড়িকে দূতাবাস বানিয়েও চালতো প্রতারণা।

দেশটির উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের অভিজাত এলাকা কাভি নগরের একটি আলিশান বাংলো থেকে আটক করা হয় ৪৮ বছর বয়সী হর্ষবর্ধন জৈনকে।

অভিযোগ উঠেছে বিশ্ব মানচিত্রে অস্তিত্ব নেই এমন সব দেশের নাম বানিয়ে গেলো ৬ মাস ধরে ভুয়া দূতাবাস পরিচালনা করছিলেন হর্ষবর্ধন জৈন। লাখো রুপি খরচ করতেন প্রতি মাসের ভাড়া বাবদ।

উত্তর প্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স জানায়, হর্ষবর্ধণ নিজেকে ওয়েস্টার্কটিকা, সাবোরগা, পলভিয়া এবং লোডোনিয়ার মতো ভুয়া দেশে কনসাল বা রাষ্ট্রদূত বলে পরিচয় দিতেন। সেসব দেশে চাকরির প্রলোভন দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিতে মোটা অংকের অর্থ। জড়িত ছিলেন অর্থ পাচারের সাথেও।

এন্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াডের এস্ক পুলিশ কর্মকর্তা সুশীল ঘুলে বলেন, ভাড়া বাসা থেকে তিনি ভুয়া দূতাবাস চালাতেন। কূটনীতিকদের ব্যবহার করা গাড়ির নম্বর প্লেটের অনুকরণে তিনি নম্বর প্লেট তৈরি করেছিলেন। এমন ৪টি গাড়ি আমরা উদ্ধার করেছি। এতে কোনো অনুমোদিত সংস্থার স্বীকৃতি ছিল না।

তিনি আরও বলেন, অফিসে তল্লাশি অভিযানে বেআইনি বহু জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদের সামনে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি জাহির করতে এবং তাদের ধোঁকা দিতে গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নিজের এডিট করা ছবি ব্যবহার করতেন তিনি।

মানুষের বিশ্বাস অর্জনে বিদেশী কূটনীতিকসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় থাকার দাবি করতেন হর্ষবর্ধণ। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বহু হাইপ্রোফাইল মানুষের সাথে তার এডিটেড ছবি জব্দ করেছে পুলিশ।

ভুয়া দূতাবাস থেকে গাড়ির অতিরিক্ত ১৮টি ভুয়া নম্বরপ্লেট, ১২টি অবৈধ পাসপোর্ট, দুটি ভুয়া প্যান কার্ড এবং ৩৪টা দেশ ও কোম্পানির জাল সিলমোহর জব্দ করে এসটিএফ। উদ্ধার করা হয় নগদ ৪৪ লাখ ৭০ হাজার রুপি, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা এবং নথিপত্র।

এর আগে, ২০১১ সালেও পুলিশের হাতে একবার আটক হয়েছিলেন হর্ষবর্ধণ জৈন। সেসময় তার কাছ থেকে একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করেছিল পুলিশ।

রাশিয়ার সুদূর পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৪৯ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য বহনকারী একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানটি চীন সীমান্তবর্তী আমুর অঞ্চলের টিন্ডা শহরের দিকে যাচ্ছিল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চলছে; তবে এখনও কোনো বেঁচে থাকা ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি।

রাশিয়ার অ্যাঙ্গারা এয়ারলাইন্স পরিচালিত একটি ‘অ্যান্টোনভ-২৪’ বিমান প্রায় ৫০ বছর ধরে সেবায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এই পুরনো বিমানটির অতীতেও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটি টিন্ডায় অবতরণের আগে রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। আকাশ থেকে পরিদর্শনে কোনো বেঁচে থাকা ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি, তবে স্থল অভিযান এখনও চলছে।

আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ টেলিগ্রামে জানান, ‘সমস্ত প্রয়োজনীয় উদ্ধার বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।’

রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় প্রথমে যাত্রীসংখ্যা ৪০ বললেও পরে তা সংশোধন করা হয়। রাশিয়ার স্থানীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে গহীন বনে ধোঁয়া ও আগুন দেখা গেছে, যা সম্ভাব্য বিধ্বস্ত স্থান নির্দেশ করে।

‘অ্যান্টোনভ-২৪’ হলো একটি সোভিয়েত-যুগের টার্বোপ্রপ বিমান, যা ১৯৬০-৭০-এর দশকে তৈরি হয়েছিল। রাশিয়া ও কিছু প্রাক্তন সোভিয়েত দেশে এখনও কিছু পুরনো বিমান চলাচল করছে, যদিও অনেকগুলোই নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে চলে।

গত কয়েক বছরে অ্যাঙ্গারা এয়ারলাইন্সের এই মডেলের বিমান ইঞ্জিন সমস্যা, ল্যান্ডিং গিয়ার ত্রুটি এবং জরুরি অবতরণের ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনায় বিমানটির পুরনো অবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাশিয়ায় এ ধরনের পুরনো বিমান এখনও ব্যবহার করা হয়, যা প্রায়ই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়া, রয়টার্স।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা আগস্টের শেষের দিকে তার পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম মাইনিচি শিম্বুন। গত ২০ জুলাইয়ের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের বড় ধরনের পরাজয়ের পরও ক্ষমতায় থাকার অঙ্গীকার করায় তিনি নিজের লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) থেকেই বাড়তে থাকা বিরোধিতার মুখে পড়েছেন।

মাইনিচি শিম্বুনের খবর অনুযায়ী, ২২ জুলাই সন্ধ্যায় ইশিবা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বলেন, বাণিজ্য আলোচনার সমাধান হওয়ার পর তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের দায়িত্ব কীভাবে নেবেন তা ব্যাখ্যা করবেন।

এরইমধ্যে, মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) এশিয়ান সময়ে ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি জাপানের সাথে একটি ‘বৃহৎ’ চুক্তি সম্পন্ন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার (৭০৩ বিলিয়ন ইউসডি) বিনিয়োগ।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ইশিবা সাংবাদিকদের বলেন, জাপানের প্রধান বাণিজ্য আলোচক রিয়োসেই আকাজাওয়া (যিনি ওয়াশিংটনে আলোচনায় ছিলেন) থেকে বিস্তারিত জানার পর তিনি ট্রাম্পের সাথে ফোনে বা সরাসরি কথা বলতে প্রস্তুত। ওয়াশিংটনের সাথে এই চুক্তি তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে ইশিবা বলেন, ‘চুক্তির ফলাফল বিশ্লেষণ না করে আমি কিছু বলতে পারব না।’

পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় ইশিবা জাপানের রাজনৈতিক শূন্যতা এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন, বিশেষ করে যখন দেশটি রফতানি নির্ভর অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে এমন কঠিন বাণিজ্য আলোচনার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

এর আগে, সোমবার (২১ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্বে থাকব এবং এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের পথ খুঁজতে সর্বশক্তি নিয়োগ করব।’ 

তিনি যত দ্রুত সম্ভব ট্রাম্পের সাথে সরাসরি কথা বলে বাস্তব ফলাফল পেতে চান বলেও জানান।

স্পেনের বার্সেলোনা শহর অত্যধিক পর্যটন ঠেকাতে দুটি ক্রুজ-শিপ টার্মিনাল বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো শহরের পরিবেশগত চাপ কমানো এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।

বার্সেলোনা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ক্রুজ বন্দর, যেখানে বছরে লক্ষাধিক পর্যটক জাহাজে করে আসেন। তবে ক্রমবর্ধমান পর্যটন শহরের অবকাঠামো, পরিবেশ ও স্থানীয়দের জন্য চাপ তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে শহরের বামপন্থী মেয়র জাউমে কলবোনির নেতৃত্বে প্রশাসন পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এই দুটি টার্মিনাল বন্ধ হলে বার্সেলোনায় ক্রুজ জাহাজের ধারণক্ষমতা ৩৩% কমে যাবে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এতে দৈনিক পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে এবং শহরের বায়ুদূষণ ও ভিড় কমবে।

অনেক স্থানীয় এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন-জনিত সমস্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন। তবে পর্যটনশিল্পের সাথে জড়িত কিছু ব্যবসায়ী ও শ্রমিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কারণ ক্রুজ শিল্প বার্সেলোনার অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো অবদান রাখে।

শহর কর্তৃপক্ষ ক্রুজ জাহাজের পরিবর্তে স্থানীয় সংস্কৃতি ও টেকসই পর্যটনের ওপর জোর দিতে চায়। এর অংশ হিসেবে তারা ঐতিহাসিক স্থানগুলোর সংরক্ষণ এবং কম দূষণকারী পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা করছে।

এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বার্সেলোনা বিশ্বের অন্যান্য পর্যটন-প্রবণ শহর যেমন ভেনিস, আমস্টারডাম ও ডাবলিনের পথ অনুসরণ করছে, যারা ইতিমধ্যেই অত্যধিক পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে।

সূত্র: সিএনএন নিউজ।

এয়ার ইন্ডিয়ার একটি এয়ারবাস এ৩২০ বিমান স্থানীয় সময় সোমবার (২১ জুলাই) মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারী বৃষ্টির মধ্যে অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে বিচ্যুত হয়। এতে বিমানের একটি ইঞ্জিনের নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রানওয়ে কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সব যাত্রী ও ক্রু সদস্যকে নিরাপদে বিমান থেকে নামানো হয়েছে, তবে কেউ আহত হয়েছেন কিনা তা বলা হয়নি। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ‘এআই-২৭৪৪’ দক্ষিণের কেরালা রাজ্যের কোচি থেকে মুম্বাইয়ে আসছিল।

মুম্বাই বিমানবন্দর এক বিবৃতিতে জানায়, এই ‘রানওয়ে এক্সকার্শন’ (রানওয়ে থেকে বিচ্যুতি) ঘটনায় বিমানবন্দরের প্রধান রানওয়েতে ‘মাইনর ক্ষতি’ হয়েছে। অপারেশন চলমান রাখতে একটি সেকেন্ডারি রানওয়ে চালু করা হয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়া আরও জানায়, বিমানটি পরিদর্শনের জন্য গ্রাউন্ড করা হয়েছে।

দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, অবতরণের পর বিমানের তিনটি টায়ার ফেটে যায়। এনডিটিভি ও ইন্ডিয়া টুডের টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ইঞ্জিনের বাইরের কভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া।