• Colors: Purple Color

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে চলছে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’। কেউ জাতীয় পতাকা হাতে উড়িয়ে কিংবা মাথায় বাংলাদেশি ফ্ল্যাগের ব্যান্ডানা পরে করছেন ‘উল্লাস’। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির কিছু বিশেষ মুহূর্ত নিয়ে আজকের আয়োজন:

নবীন-প্রবীণ একসাথে উপভোগ করছে ‘৩৬ জুলাই’।
বিশেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে ব্যস্ত একজন ক্যামেরাম্যান।
কেউ আনন্দে নাচছে, কেউ লাল-সবুজ রঙ বিলিয়ে দিচ্ছে নীল আকাশে।
আনন্দ ভাগাভাগি করতে পিছিয়ে নেই সাংবাদিকও। মাইক পকেটে, আনন্দভরা মুখ, লাল রঙ আর নীল আকাশ।
পতাকা হাতে বাংলাদেশ ২.০।

ত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনের সেই ঘটনার স্মৃতিচারণা করে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেছেন, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর সেই বিকেল ছিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ।

আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সামাজিক মাধ্যম ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

বাঁধন লিখেছেন, যখন খবর ছড়িয়ে পড়ে যে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন—জনতার গর্জনে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন—তখন যে উল্লাস, যে বিস্ফোরণ জনতার মাঝে দেখা গিয়েছিল, তা আমি জীবনে কখনও দেখিনি। বাসায় বসে, অফিস থেকে বা শুধু সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করে এই অনুভূতি বোঝা যাবে না। এটা বুঝতে হলে সেখানে থাকতে হতো।

তিনি আরও লিখেছেন, পুরো জাতি একসঙ্গে জেগে উঠেছিল। কেউ কেঁদেছে, কেউ হেসেছে, কেউ নেচেছে, কেউ স্লোগান দিচ্ছিলো। চারদিকের বাতাস যেন হয়ে উঠেছিল মুক্তির বিদ্যুতে আলোড়িত। সেই মুহূর্তটাই আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি। আমি বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে গর্বিত। কী এক বিজয়! কী এক অসাধারণ সাফল্য।

উল্লেখ্য, আজ ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। ঠিক এক বছর আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে পতন হয় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার। সরকার প্রধানসহ, সংসদ সদস্য, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এমনকি জাতীয় মসজিদের খতিবও পালিয়ে যায় আন্দোলনের ব্যাপকতায়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দলের এমন পরাজয় বিরল। ৩৬ দিনের টানা আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও’।

গত বছরের ৫ আগস্ট ও আজকের দিনে প্রবাসে অবস্থানরত মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার স্মৃতিচারণা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জুলাই আন্দোলনের সময়ের ভয়, সংশয় ও স্বৈরাচার জয়ের গল্প তুলে ধরেছেন। আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সামাজিক মাধ্যম ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল লিখেছেন, সকালে উঠেই প্রথম ফোন করলাম আমার মেয়েকে। কণ্ঠ শুনে বুকটা ভেঙে পড়লো। এই সময়টায় ঠিক এক বছর আগে ও আমাকে ফোন করেছিল। ও শুধু আমার মেয়ে না, হাজারো প্রবাসী সন্তানদের প্রতিচ্ছবি—যারা অপেক্ষায় ছিল, দুশ্চিন্তায় ছিল, ভয়ে কাঁপছিল। মনে পড়ে গেল সেই দিনগুলো—ফোন ছিল বন্ধ, যোগাযোগ অসম্ভব। কত রাত আমরা ঘুমোতে পারিনি।

গত বছরের ঘটনা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, কথা বলতে পারছিলাম না ঠিকমতো। ও শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, `কী হচ্ছে?’ আমি কিছুই বুঝিয়ে বলতে পারিনি, শুধু বলেছিলাম—ইনশাআল্লাহ, জয়ী হবো।

দেশের ভেতরের মানুষ যেমন কষ্ট পেয়েছে, যারা বাইরে ছিল, তাদের যন্ত্রণা কোনো অংশে কম ছিল না। রাতজাগা, অশ্রু, আতঙ্ক—সব ছিল আমাদের সাথেও। সেই সঙ্গে ছিল অটুট বিশ্বাস—যে অন্যায়ের পতন হবেই।

শেখ হাসিনার পালানোর দিনকে ঐতিহাসিক দিন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব লিখেছেন, হাজারো শহীদ, হাজারো যোদ্ধার ত্যাগ—৫ আগস্ট ২০২৪ শুধুই একটি তারিখ না, এটি ইতিহাস বদলের মুহূর্ত। এটি বহু বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ফল, যা আমরা সবাই মিলে অর্জন করেছি।

আমরা চিরঋণী—জুলাই ২০২৪ এবং গত ১৫ বছরের শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি, প্রতিটি সংগ্রামী প্রাণের প্রতি। আমি কৃতজ্ঞ দেশের ভেতরে ও বাইরে থাকা প্রতিটি মানুষকে, যারা সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।

পোস্টের শেষে লিখেছেন, স্বাধীনতা অর্জন দায়িত্বও। আমাদের করণীয় এখন এই অর্জনকে রক্ষা করা—বুদ্ধি, সংযম আর সাহস দিয়ে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ’র কক্সবাজার ভ্রমণ নিয়ে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।

৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে তারা কেন কক্সবাজারে গেলেন- তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, সেখানে তারা বৈঠক করেছেন, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব তাসনিম জারা।

যমুনা টেলিভিশনকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, ব্যক্তিগত ভ্রমণে গেছেন কক্সবাজারে। পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিকে গুজব। এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।

জানা গেছে, আজই তারা নিয়মিত একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরে আসছেন।

এদিকে, সী পার্ল হোটেলের চীফ সিকিউরিটি অফিসার লে. (অব.) কমান্ডার কামরুজ্জামান দাবি করেছেন, পিটার হাস তো নয়ই; কোনো বিদেশি অতিথিই নেই সেখানে।

অন্যদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠান চলছে। সেখানেই ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠান চলছে। অনুষ্ঠানে পারফর্ম করছেন বিভিন্ন ব্যান্ডের শিল্পীরা। আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টায় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনার মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাইমুম শিল্পীরা ওস্তাদ তোফাজ্জেল হোসেনের লেখা ‌‘এই দেশ আমার বাংলাদেশ, আমার ভালোবাসা’ গানটি পরিবেশন করেন।

এদিকে, শেখ হাসিনার পলায়নের এক বছর উপলক্ষে ‘ফ্যাসিস্টের পলায়নের ক্ষণ’ পালন করেছে ছাত্রজনতা। বেলা ২টা ২৫ মিনিটে এ উদযাপন করা হয়। প্রতীকী গ্যাস বেলুনের ‘হেলিকপ্টার’ ওড়ানোর মাধ্যমে তারা অনুষ্ঠান পালন করেছেন।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সূচি অনুযায়ী, দিনব্যাপী এই আয়োজনে পর্যায়ক্রমে মঞ্চে আসবেন দেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা শিল্পীগোষ্ঠী, ব্যান্ড ও একক শিল্পীরা। বিকেল পৌনে ৫টায় আসরের নামাজের বিরতি রয়েছে। এরপর ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে বেসিক গিটার লার্নিং স্কুলের পরিবেশনা রয়েছে। ৫টা ৫০ মিনিটে এফ মাইনর এবং ৬টা ১৫ মিনিটে পারশা মঞ্চ মাতাবেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে মাগরিবের আজান ও নামাজের বিরতি দেওয়া হবে।

এরপর সন্ধ্যা ৭টায় এলিটা করিম সংগীত পরিবেশন করবেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্পেশাল ড্রোন ড্রামা ‘ডু ইউ মিস মি’ পরিবেশিত হবে। এরপর ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হবে। তারপর সংগীত পরিবেশন করবে জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল। এ ছাড়া আরও থাকবে নানা আয়োজন।

একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে, ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি দেয়া এক বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা পুরো জাতি একসঙ্গে স্মরণ করছি এমন একদিন, যা এদেশের ইতিহাসে গভীর ধাপ রেখে গেছে। ৫ আগস্ট শুধু একটি বিশেষ দিবস নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন। আজ আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এদেশের জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। লাখো প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও এদেশের মানুষ সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সংকটময় অধ্যায়। ১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। 

‘এদেশের এই বিপুল সংখ্যক তরুণ ১৬ বছর ধরে ক্রমাগত হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। ভালো ফলাফল করেও চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চাকরিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর তদবির বাণিজ্য। যে তরুণ ঘুষ দিতে পারেনি, এলাকার মাফিয়াদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারেনি, তার চাকরি হয়নি। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি, যেটা মূলত ছিল দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আরেকটা হাতিয়ার। এর বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলেও ফ্যাসিবাদী শাসকের টনক নড়েনি।’

প্রতিটি সেক্টরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা আর্থিক অন্যান্য সুবিধার বিনিময়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলবে, কাজ করবে, স্বৈরাচারের পক্ষের সঙ্গী হলেই তার চাকরি হবে। কাজ মিলবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক মন্ডলেও এ ধরনের সুবিধাবাদী শ্রেণি তৈরি হয়েছিল। এদেশের গরীব মেহনতি মানুষের পয়সা লুট করে, পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের সহযোগীরা একেকজন টাকার পাহাড় গড়ে তোলে। সীমাহীন দুর্নীতির কবলে পড়ে অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। এই দেড়যুগে প্রতিটি ন্যায্য দাবি প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের পিটিয়েছে। 

গত ১৬ বছরে যারাই সরকারের সমালোচনা করেছে, নাগরিকদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে, তাদের গ্রেফতার অথবা গুম করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, লাখ লাখ বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্বিচারে আটক, গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ২৪ জুলাই দেশের ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম, সাধারণ মানুষ সবাই একত্রিত হয় এক নতুন দিনের প্রত্যাশায়। সমস্বরে তারা বলে ওঠে, এবার ফ্যাসিবাদীদের যেতে হবে। তবু দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিল ফ্যাসিবাদ সরকার। তারা নির্বিচারে গুলি করেছে। গ্রেপ্তার করেছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য লুকাতে চেয়েছে। রাতের অন্ধকারে এলাকায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রদের আটক করেছে। গুলিবিদ্ধ আহতদের তারা হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে দেয়নি। হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন আহতদের ভর্তি না করা হয়। এ কারণে বহু মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে জাতির সূর্য সন্তান জুলাই শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। জুলাইয়ে যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন, দৃষ্টি হারিয়েছেন, জাতির পক্ষ থেকে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই জাতি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার, আহতদের কল্যাণ ও যাবতীয় বিষয় প্রশাসনিক দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর বিন্যস্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮৩৬টি শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি শহীদ পরিবারকে মোট ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা বাবদ ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট যারা আছেন তাদেরও কয়েকটি বিষয় নিষ্পত্তি সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর পাশাপাশি আহত ১৩ হাজার ৮০০ জুলাই যোদ্ধাকে তিনটি ক্যাটাগরিতে নগদ টাকা ও চেক বাবদ মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। 

এর মধ্যে ৭৮ জন অতি গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধাকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং রাশিয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা ব্যয় বাবদ এ পর্যন্ত ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে সব শ্রেণির আহত জুলাই যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ ও আহতদের জন্য আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে জুলাইয়ের মহানায়কদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে, যখন এ দেশকে আমরা একটি সত্যিকারের জন কল্যাণকর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। 

‘আজ আমরা কেবল অতীত স্মরণ করতে আসি নাই। আমরা একটি শপথ গ্রহণ করতে এসেছি। শপথ এই—আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াবো না। আমরা প্রতিষ্ঠা করব, একটা জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। এমন রাষ্ট্র- যা সবসময় জনকল্যাণে কাজ করবে। জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাদের আত্মত্যাগই হবে আমাদের পথ চলার প্রেরণা। তাদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের নির্মাণ রাখা। আজকের এই দিনে এটাই হোক আমাদের শপথ।

আমাদের অনুসরণ করুন

 

সর্বাধিক পড়ুন

  • সপ্তাহ

  • মাস

  • সব