সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার: উপযুক্ত সময়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও এর সদস্যদের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচারের বিষয়ে বাহিনীর সকলকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের বিভিন্ন স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে এমন কাজ (অপপ্রচার) করছে। এসবের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পেশাদারী আচরণ করাই শ্রেয়। তবে এই সকল অপরাধ যথাযথভাবেই লিপিবদ্ধ থাকছে এবং উপযুক্ত সময়ে এই সকল দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকালে ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাসদস্যদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে পদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন এবং দেশের অন্য সব সেনা স্থাপনার কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে সেনাপ্রধান সকল সেনানিবাস ও জাতিসংঘ মিশনে মোতায়েন সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রায় ৩৮ মিনিট বক্তব্য রাখেন। দ্বিতীয় অংশে প্রায় ১ ঘণ্টা কর্মকর্তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
সেনাসদস্যদের উদ্দেশে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।
তখন তিনি উল্লেখ করেন, এই ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের মানুষ সেনাবাহিনী ও এর প্রত্যেক সদস্যের প্রতি সবসময়ই কৃতজ্ঞ থাকবে।
এ সময় সেনাপ্রধান বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেন। যার মধ্যে সেনা সদস্য কর্তৃক সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ মূলক কার্যক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অযাচিত প্রচারণার বিষয়ে তিনি বলেছেন, প্রচলিত সেনা আইন ও প্রথা অনুযায়ী সেনা সদস্যবৃন্দ কর্তৃক সংঘটিত সকল অন্যায়েরই বিচার হয়ে থাকে। তবে সকলকে মনে রাখতে হবে, অপ্রতুল প্রমাণের ভিত্তিতে অপ্রয়োজনীয় দ্রুততার সাথে বিচার করলে তা ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ সংগ্রহ করত: চলমান সকল অভিযোগের বিষয়েই যথাযথ বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেছেন, ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে এবং সরকার তা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সকল সেনা সদস্যকে আইন অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মহল বিভিন্ন হীন স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, তবে আমাদের একতা ও পেশাদারী আচরণের কারণে তাদের হীন উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারেনি।
এছাড়া, সেনা প্রথা ও আইন অনুযায়ী সেনা সদস্যদেরকে রাজনৈতিক বিষয় থেকে দূরে থাকা, মাদক হতে দূরে থাকা, ইন এইট টু সিভিল পাওয়ার কর্তব্য পালনের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ে কোনও জীবনহানি বা আহতের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা, যানবাহন দুর্ঘটনা প্রতিরোধ মূলকব্যবস্থা গ্রহণ, সেনা সদস্যদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবারের প্রতি অধিক যত্নশীল হওয়া এবং সন্তানদের যথাযথভাবে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সহকারে গড়ে তোলা, বিশেষ করে সন্তানদের মাঝে আচরণমূলক সমস্যা ও মাদকে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার বিষয়েও জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কথা বলেন।