দীর্ঘ ২৭ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শিরোপা জয়ের খুব কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে দলটা দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই হয়তো এখনও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। বড় ম্যাচে চাপ সামলাতে না পারার নজির আছে তাদের। ইংল্যান্ডের লর্ডসে চলমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে প্রোটিয়াদের প্রয়োজন আর মাত্র ৬৯ রান, হাতে আছে আরও ৮ উইকেট।
যদিও তাদের লক্ষ্যটা সহজ ছিল না। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের লক্ষ্যটা বড় স্কোরই বটে, আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল হিসেবে সেটির মাহাত্ম্য আরও বেশি। তবে একেবারেই যে অসম্ভব নয় সেটাই যেন প্রমাণে মরিয়া ১৯৯৮ সালের পর কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট না জেতা দক্ষিণ আফ্রিকা।
এমনকি যেকোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপেই শীর্ষ চারের লড়াইয়ে হেরে নামের পাশে তারা ‘চোকার’ তকমাও জুটিয়েছিল। সেটি ঝেড়ে ফেলে এবার ইতিহাস গড়ার সুযোগ হাতছানি দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে।
ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে ২৮২ রানের বড় লক্ষ্যকে প্রায় হাতের নাগালে নিয়ে এসেছেন এইডেন মার্করাম ও টেম্বা বাভুমা। ম্যাচের তৃতীয় দিনে এইডেন মার্করাম তার টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। আর এই সেঞ্চুরি তাকে যুক্ত করেছে ইতিহাসের পাতায়। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কোনো ব্যাটার হিসেবে যেকোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেঞ্চুরি করলেন মার্করাম।

এর আগে যেকোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিল ৬১। হ্যান্সি ক্রনিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেই রান করেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসর। এরপর আর কোনো আইসিসি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
অজিদের বিপক্ষে প্রোটিয়াদের শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখানো মার্করামের সেঞ্চুরিতে বেশ কয়েকটি রেকর্ড হয়েছে। ঐতিহাসিক লর্ডসে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সেঞ্চুরি করেছেন। আগের দুটি ম্যাজিক ফিগার ছিল অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেডের।
এছাড়া একই ভেন্যুতে আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে সেঞ্চুরি করা ব্যাটারদের মধ্যে মার্করাম তৃতীয়। আগের দুই সেঞ্চুরিয়ান দুই ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড ও ভিভিয়ান রিচার্ডস।
বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডসে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ব্যাটার মার্করাম। এর আগে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটাররা হচ্ছেন গর্ডন গ্রিনিজ (২১৪, ১৯৮৪), রয় ফ্রেডরিকস (১৩৮, ১৯৭৬), মাইকেল ক্লার্ক (১৩৬, ২০০৯), অজিত আগারকার (১০৯, ২০০২) ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (১০২, ১৯৩৮)।
এছাড়া টেস্টে ওপেনারদের মধ্যে চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি করা ব্যাটারদের তালিকায়ও নাম লেখালেন মার্করাম। চতুর্থ ইনিংসে ৪টি করে সেঞ্চুরি আছে সুনীল গাভাস্কার ও গ্রায়েম স্মিথের। আর মার্করামসহ ৩টি করে সেঞ্চুরি করেন হার্বার্ট সাটক্লিফ, গফ্রি বয়কট, গর্ডন গ্রিনিজ ও গ্রাহাম গুচ।
লর্ডসে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ডাক (শূন্য রানে আউট) নিয়ে ফেরার পর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে ৯ জনের। নতুন করে সেই দলে নাম লেখালেন মার্করাম। এছাড়া তিনি পঞ্চম প্রোটিয়া ব্যাটার হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে এই কীর্তি গড়লেন।
চলমান টেস্টে ১৫৯ বলে ১১ চারে ১০২ রানে অপরাজিত আছেন মার্করাম। শিরোপা জয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত রানের অঙ্কটা বাড়িয়ে তার সামনে আরও বড় ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হওয়ার হাতছানি দিচ্ছে।

এদিকে ব্যাটিংয়ে নামার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা জেনে গিয়েছিল তাদের লর্ডসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লক্ষ্য তাড়া করতে হবে। অথচ ওপেনিংয়ে এলেন আগের ইনিংসে ডাক নিয়ে আউট হওয়া মার্করাম। তবে এবার আর তিনি গড়বড় করেননি। রায়ান রিকেলটন দ্রুত ফিরে গেলেও মার্করাম প্রথমে মুল্ডার (৬১ রানের জুটি) ও পরে বাভুমার সঙ্গে দৃঢ় জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন।
উল্লেখ্য, বাভুমা ইনজুরির মধ্যেও খেলেছেন, অন্যদিকে স্টিভ স্মিথ ক্যাচ মিস করার সময় চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান, যা অস্ট্রেলিয়ার জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।
আজ শনিবার চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই নিশ্চিত হতে পারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের শিরোপা।লর্ডসের ঝলমলে আলোয় দক্ষিণ আফ্রিকা যেন এগিয়ে যাচ্ছে একটি নতুন ইতিহাস গড়ার দিকে…..