• Colors: Purple Color

চব্বিশের ২৭ জুলাই কারফিউ জারির অষ্টম দিন চলছিল। দিনের কারফিউ শিথিলের সময় রাস্তায় যানবাহনের সারি দেখা যাচ্ছিলো। তাতে মনে হচ্ছিল যেন স্বাভাবিক হচ্ছে দেশ। কিন্তু আসলেই কি তাই? ভেতরে ভেতরে কিছু একটা চলছিল।

২৬ জুলাই তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও বাকেরকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন নতুন করে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ৫ সমন্বয়ককে তুলে নেয়াকে নিরাপত্তা হেফাজত বলে দাবি করেছিলেন তৎকালীন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেছিলেন, ফেসবুকে সমন্বয়করা নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছিলেন। কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে তাহলে তাদের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব।

এদিকে, দেশজুড়ে তখন গণগ্রেফতার চলছে। মাত্র কয়েকদিনে সারাদেশে কয়েক হাজার আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়। বেছে বেছে আন্দোলনে অংশ নেয়াদের চিহ্নিত করা হচ্ছিলো।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কৌশলটি ধরতে পরে সেদিন বিকেলেই সংবাদ সম্মেলন করে বাইরে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সেই সংবাদ সম্মেলনে ৫ সমন্বয়কের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহারসহ ৩ দফা দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা।

এমন কিছু যে ঘটতে পারে, তা আগেই আঁচ করতে পেরেছিল সমন্বয়করা। এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই প্ল্যান-বি প্রয়োগ করে তারা।

তৎকালীন সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, মাঠে যেই থাকবে সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিবে এমনটা আসিফ আগেই বলেছিল। জোর করে বিবৃতি দেয়ানো হতে পারে এমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল কেউ বিবৃতি দিলেও আন্দোলন চলবে।

তৎকালীন আরেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, আমরা গুম-খুনের শিকার হলেও বাইরে থাকারা আন্দোলন চালাবে এমন বিশ্বাস ছিল।

অন্যদিকে হাসপাতালে তখনও গুলিবিদ্ধ তরুণরা কাঁতরাচ্ছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে তখনও দগদগে গুলির ক্ষত। অথচ সেই অবস্থাতেও ইট-পাথরের জন্য শেখ হাসিনার মায়াকান্না চলছে। সেদিন সেতুভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর পরিদর্শনে যান শেখ হাসিনা। চলে দায় এড়োনোর চেষ্টা।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি আন্দোলনের মূল ঘটনা ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে তখন ভীষণ ব্যস্ত তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরা।

সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, আমাদের কাছে তথ্য, ভিডিও ও ছবি রয়েছে। তদন্ত করে জড়িত্ন প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

তখন জনগণকে বোঝানো হচ্ছিলো সব স্বাভাবিক হচ্ছে। অন্যদিকে গোপনে আন্দোলনকে জঙ্গি তৎপরতার তকমা দেয়ার পাঁয়তারা চলছিলো।

মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সংকটের সমাধান চায়, সবার মধ্যে ঐক্য থাকলে সফল হওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।বলেন, বিএনপি জনগণের প্রয়োজনীয়তা সচেতন। রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতার সাথে এগোচ্ছে বিএনপি।

তিনি বলেন, ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছি। তবে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে। এটিকে কাজে লাগাতে পারলে সফল হবো। সবকিছু মানুষের উপর নির্ভর করবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশের মানুষ পারে। সেটি ৭১ সালে প্রমাণিত হয়েছে। ২৪ এও প্রমাণিত হিয়েছে।

ফখরুল বলেন, পদ্মা ব্যারেজ এবং দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক অংশ বাস উপযোগিতা হারিয়েছে। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খালেদা জিয়া অনেক আগেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কথা বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, সংস্কার আগেই বিএনপি উপলব্ধি করেছে। তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন। রাজনৈতিক কমিটমেন্ট প্রয়োজন। তবে, জনগণের মধ্যে দাবিও উঠতে হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলোর স্থায়ী বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করেনি একনেক সভা। খরচের হিসাব মূল্যায়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য জানান, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বলেন, প্রকল্প এগিয়ে নেবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ৮ হাজার ১৪৯ কোটি টাকার ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২৭ জুলাই) সকালে এনইসি মিলনায়তনে চলতি অর্থবছরের প্রথম একনেক সভায় নানা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সভায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের স্থায়ী বাসস্থানের জন্য, ‘৩৬ জুলাই আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রকল্প’ উত্থাপন করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটিকে সাধুবাদ জানালেও অনুমোদন দেয়নি একনেক সভা। প্রশ্ন ওঠে, শুধু ঢাকায় কেন আবাসন প্রকল্প হবে? দেশজুড়ে জুলাই যোদ্ধারা ছিলেন। অনেক পরিবার ঢাকায় থাকতে চায় না।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, ব্যয়ের প্রাক্কলন আরও যথাযথ হওয়া উচিত। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে প্রকল্পটিকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে।

পরে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি ২ হাজার কোটি টাকার স্যানিটেশন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, আপাতত আমাদের স্যানিটেশন সিস্টেম প্রতিবেশি ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশের চেয়ে ভালো।

গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত র‍্যাপিড বাস ট্রানজিট কার্যক্রমকে বড় ধরণের অপরিকল্পিত প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করা হয় একনেক সভায়। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিপুল ব্যয়ের এই অহেতুক প্রকল্পের নকশা ও পরিকল্পনার সাথে কারা জড়িত ছিল, তা অনুসন্ধান করা হবে।

সভায়, ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে ‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর আওতায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বহুতল হল ও আবাসন ভবনের পাশাপাশি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে।

সরকার পরিবর্তনের পর বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একনেক। এসব প্রকল্পের সাথে জড়িত প্রকল্প পরিচালক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিষয়েও তদন্ত করা হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থান।

রোববার (২৭ জুলাই) এনসিপির জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে নেত্রকোনায় এক সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছিল। সেই সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসে অভ্যুত্থান করে তাদের পতন নিশ্চিত করে।

তিনি বলেন, একটি নতুন সংবিধান ও সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। সংবিধানের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, মুজিববাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কাজ করাসহ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় কাজ করবে এনসিপি। একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণে মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে নাহিদ বলেন, তরুণদের জন্য এনসিপি গঠিত হয়েছে। তরুণদের সাথে নিয়েই একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবো আমরা। বয়োজ্যেষ্ঠদের অভিভাবকের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়ে এনসিপিকে সাহায্য ও পরামর্শ দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

রাজধানীর উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় চিকিৎসা দিতে আসা বিদেশি চিকিৎসকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (২৭ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারতের ২১ জন চিকিৎসক ও নার্সের একটি প্রতিনিধিদল। সাক্ষাতকালে তিনি তাদের প্রতি এই কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংকটের সময়ে তাদের উৎসর্গ ও সংহতির প্রশংসা করেন এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

ড. ইউনূস বলেন, এই দলগুলো শুধু তাদের দক্ষতা নিয়েই আসেনি, এনেছে তাদের হৃদয়ও। তাদের উপস্থিতি আমাদের অভিন্ন মানবিকতা ও বিপর্যয়ের সময়ে বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মূল্যকে আবারও নিশ্চিত করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আহতদের জটিল চিকিৎসা ও ট্রমা কেয়ার নিশ্চিত করতে মেডিক্যাল টিম স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের পাশাপাশি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত কূটনৈতিক সমন্বয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান, যার ফলে দলগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে ও সময়মতো বাংলাদেশে পৌঁছে তাদের কাজ শুরু করতে পেরেছে।

তিনি সফররত চিকিৎসকদের তাদের লক্ষ্য সহজতর করতে সরকারের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন।

প্রধান উপদেষ্টা স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা, চিকিৎসা শিক্ষার আদান-প্রদান এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে অংশীদারিত্ব বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী এমনকি ভার্চুয়ালি সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি জোর দেন, এই জাতীয় অংশীদারত্ব জনস্বাস্থ্য ও জরুরি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।

বৈঠকে সিঙ্গাপুরের ১০ জন, চীনের ৮ জন এবং ভারতের ৪ জন চিকিৎসক ও নার্স উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ও সিঙ্গাপুরের মিশন প্রধানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীল নয়, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- যারা যত চেষ্টাই করুক, চাপে ফেলে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলা যাবে না।

সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে শাহবাগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যুবদলের ঢাকা শহরের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গ্রাফিতি অংকন এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শুধু যুবদলেরই ৭৯ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই আন্দোলন গুটিকয়েক ব্যক্তির নয়; ছিল সব বয়সী মানুষের। বিএনপি সংস্কারে সহযোগিতা করছে জানিয়ে শেখ হাসিনার বিচারের কাজ নিয়ে সরকরের ভূমিকার সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পাঁচ নেতার গ্রেফতারের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। বলেন- ডিবি অফিসের শত নিপীড়নের পরও বিএনপির কোন নেতাকর্মী আত্মসমর্পণ করেনি, কারো কাছে সেসময় মুচলেকাও দেয়নি।

আমাদের অনুসরণ করুন

 

সর্বাধিক পড়ুন

  • সপ্তাহ

  • মাস

  • সব